বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০১০

অসুখ - ০৩ (১৯ মে ২০১০)


কালো জামা পরা কিছু ছেলে আসে, ব্যস্ত কাক এবং কুকুর
আমি দেখি সব নষ্ট খেলনাগুলো আমার বারান্দায়
ওগুলো হয়তোবা কোনকালে ছিল রবোট কিংবা গাড়ি
এককালে আমিও ছিলাম, এককালে বড্ড বাচ্চা ছিলাম
আমি নষ্ট খেলনা বাসতামনা, ও যেমন আমায় বাসতনা
তবু ওকে চাইতাম মনের মধ্যে ক্ষুধা আর অসুখ নিয়ে ;

সাদা জামা পরা এক বুড়ো যায়, হাতে ময়লার ব্যাগ
তাতে রক্ত, মুরগির মুন্ডু, বেড়ালের বাচ্চার লাশ
বেড়াল দেয়াল ডিঙ্গোয়, আমিও কোনকালে হয়েছি বেড়াল
ও কখনও বেড়াল বাসেনা, তাই আর হলোনা
আমি বুঝিনা, কোন দুঃখে বেড়াল হলাম
আজো ওকে চাই শরীরের মধ্যে ক্ষুধা এবং অসুখ নিয়ে ।।

ডায়েরীর ছেঁড়া পাতাঃ ১৯ মে ২০১০


বড় বেশি দূরে থাকি, অথবা থাকি না
বচনের ভর বাড়ে ভাষাভিত্তিক ভালবাসায়
অপ্রিয় আর বাস্তব কিছু সম্পর্কের ডালপালা বিস্তৃত ক্রমাগত
সভ্যতার তলায় আরোপিত উল্লাসে বসবাস
এরপর আরো যত বাহ্যসর্বস্ব বিষয়াদি
সুখ না অসুখ, এ সংক্রান্ত অসুস্থ সংলাপ
বিশুদ্ধ শূন্যতা পলাতক, কেবল স্থূল সব দুঃখ
নিজের সঙ্গে প্রতারণা, একাকীত্বের মাতম

ভালবাসা কে কাকে বাসে, সে আরেক কৌতুক
আপাতত বায়ু চলাচল পর্যাপ্ত
নিজেকে সুখী বলে জোরালো দাবী তোলা যেতে পারে,
তবে প্রশ্ন, দাবী উত্থাপিত হবে কার উদ্দেশ্যে
আর বিপক্ষেই বা কারা ।।

বুধবার, ১৯ মে, ২০১০

কথনঃ ১৯ মে ২০১০

শহর বৃষ্টিহীন বহুকাল,
আকাশে পর্যাপ্ত মেঘ
তবু আজ বৃষ্টি নামবে না,

হাওয়া আসবে ঝোড়ো
সরল ছন্দিত স্পন্দনে
দু'এক ফোঁটা জলও ঝরবে
হয়তোবা ভুলে,

তবু আজ বৃষ্টি নামবে না
তবু আজ বৃষ্টি আসবে না ।।

বাইস্কোপ মানুষ (১৮ মে ২০১০)

সলতেতে আগুনের ছোট্ট শরীর
কাঁপতে কাঁপতে বলে, "আমি আর নেই বেশিক্ষণ.."
প্রত্যুত্তরে নীরব বাইস্কোপ মানুষ
কপালজুড়ে দুশ্চিন্তার অজস্র দাগ
আরো কিছু সময় বড়ো প্রয়োজন,
স্বপ্নের অবশিষ্ট পাতাগুলো গাঁথতে হবে
স্বপ্নবাক্সে বাঁধতে হবে অতিদ্রুত,
কেননা প্রদীপ নিভলেই রাত
মৌলিক অন্ধকার জোনাকবিহীন
বিষণ্ণ আর উপবাসী
পারিবারিক পরবর্তী দিন,
আর রাতের প্রশ্রয়ে
দারিদ্র্যের সঙ্গে আবশ্যিক সহবাস;

তবু বাইস্কোপ মানুষ স্বপ্ন গেঁথে যায়
গাঁথতে গাঁথতে চলে যায়
দেবতার কাছাকাছি, হঠাৎ
নুনপানি উঠে আসে কোত্থেকে যেন
সাথে আনে গান...
"কী চমৎকার দেখা গেল.. কী চমৎকার দেখা গেল.."

শুক্রবার, ১৪ মে, ২০১০

অসুখ - ০২ (১৪ মে ২০১০)

এখন নিভন্ত রাত বৈশাখের
যে আগুন একান্ত নারীর
তা খুবলে খেয়েছে অন্যপুরুষ
আর আমি অসুখে অ-সুস্থ,
নিজস্ব আঁধার পেরিয়ে
ছিল নরম জলের ঝিল
স্বপ্নবাগান,
সভ্যতার ক্ষুধার্ত চুম্বনে তা-ই
বহুতল বাণিজ্যিক ভবন
দূষিত লেকের গা-ঘেঁষে
আমি উদ্বাস্তু, উন্মাদ
ব্যাকরণে ব্যর্থ বারবার,

এ শহর
নর্দমা আর আস্তাকুঁড়ের যাদুঘর
আমার জন্য বরাদ্দকৃত নরক,
বিলুপ্তির আশংকায়
নৈসর্গকে ধরা হয়েছে সেলুলয়েডে
কেননা ব্যাপক মুনাফার সম্ভাবনা
বাহ্ বাহ্ ।।

কথনঃ ১৪ মে ২০১০

পরাজিত সৈনিক যেভাবে হাঁটে ঠিক সেভাবে
কেউ একজন বলেছিল পিছু হটা বারণ
সেরেব্রালে অসহ্য যন্ত্রণা,
বৃক্ষরা বৃষ্টি পেলে সুন্দর হয়
বেদনার মতন কালো কালো অক্ষরগুলো
বিকট চিৎকারে কোরাস গায়,
নির্মাণ না ধ্বংস, কার পক্ষে যাবে সভ্যতা ;

মানুষ দেখতে দেখতে
ক্রমাগত দেউলিয়া মানুষ ভালবেসে
যত বিদগ্ধ মানুষ ভালবাসা বোঝে
প্রবঞ্চক, প্রবঞ্চক এবং প্রবঞ্চক,
স্লিভলেস অশ্লীলতায় ভরপুর ভোগবাদ
বহুল ব্যবহৃত বাণিজ্যিক পণ্য,
জনগণ আড়চোখে দেখে ভাবে বিপরীত
কলম - কাগজের অস্বাভাবিক সংকট
কমে যাচ্ছে কবিতার শরীর ;

পরাজিত মানুষ যেভাবে বাঁচে অনেকটা সেভাবে
কে যেন বলেছিল ভাল থাকা বারণ
পাঁজরের অগোছালো কষ্ট,
বুড়ো বাড়িগুলোর ভাগ্যে অম্ল-বৃষ্টি
আবর্জনার রাজ্যে কালো কালো কাকবৃন্দ
গম্ভীর হয়ে আছেন,
প্রতিপত্তি না সুখ, কোনদিকে যাবে মানুষ ।।

একজন পাথর ভাঙ্গা শ্রমিক (১৪ মে ২০১০)

তিনি পাথর ভেঙ্গে থাকেন
বিছিয়ে দিয়ে কুচকুচে পিচ
পথ গড়ে দেন,
যোগাযোগ গাঢ় হয়
দেখতে দেখতেই
আমরা রূচিশীল, আধুনিক
আর সূর্যের উত্তপ্ত সহবাসে
জ্বলতে জ্বলতে তিনি বৃদ্ধ
চুলের সিঁথিতে পরিপাট্য নেই বহুকাল,
আমাদের ধর্ম, রাজনীতি, মূল্যবোধ
তিনি বুঝবেননা কোনদিন
কেবল ক্ষুধা আর দারিদ্র্য বোঝেন,
আমরা তো হরেক রঙে সাজাই শরীর
ভীষণ সভ্য আর উচ্চশিক্ষিত তাই
মেঘের গায়ে আবাস গড়ি,
উনার কেবল অসুখের ওষুধ হয় না
বউ ঘরে থাকে না
ছেলেটা চুরি করে, মেয়েটা হারিয়ে যায়
পরনে সুসভ্য বস্ত্র নেই বলে উনি লজ্জিত
আর আমরা কি দারুণ সভ্য
সচেতন মস্তিষ্কে গড়ি জীর্ণ বস্ত্রের ফ্যাশন,
চতুর্দিকে নানান ভাঙ্গন
রাস্তাঘাট, অবৈধস্থাপনা আর হৃদয়,
উনি দেখেন আর পাথর ভেঙ্গে যান
নোটিশবিহীন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ।।

শুক্রবার, ৭ মে, ২০১০

পাঁজরের প্রাসঙ্গিক পুঁথি (০৩ মে, ২০১০)

প্রাকৃত সমুদ্রঘ্রাণ পর্যাপ্ত নয় দাসের শরীরে
মনিবের কড়া চোখ মৌলিক লাল সংগত সন্দেহে,
ডানে-বাঁয়ে রাষ্ট্রনীতি অগণন তুমুল আন্দোলন
রক্তিম দূর্বায় সুসজ্জিত বারংবার সময়ের প্রাঙ্গণ,
জাগে মানবিক ঝড় ভিখিরীরা অজগর
বিঃধ্বস্ত সভ্যতা শহর বর্বর,
কালনীর গাঢ় বুক, নিবু নিবু লণ্ঠন
দেবীর শরীর লোটে প্রাজ্ঞ পুরোহিত
প্রাসঙ্গিক দুর্যোগে বিলুপ্ত ঈশ্বর;

নষ্ট সংসার, আদিম মাংসে পুরে কামের শরীর
বালিকা ধর্ষক শেষে মহা বৈষয়িক
নাব্য নিবিড় স্নানে বাক্যরাও জৈবিক
লাঞ্ছিত পৃথিবী, রক্তের বিন্দুতে পর্যাপ্ত স্থির ।।

শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১০

বৈপরীত্য (২৩ এপ্রিল ২০১০)

তোমার স্নানের জন্য অপেক্ষায় ছিল পৃথিবীর শুদ্ধতম জল
আর সহস্র বৎসর ব্যবধানে কোন জল নেই
তবু আমি সিক্ত নিজস্ব জলে,
শরীরের প্রতিটি অধ্যায়ে সাজিয়েছ এক একটি শিল্প বিপ্লব
এই দ্যাখো আমার গায়ের ক্ষতগুলো
এক একটি যুদ্ধ, এক একটি ধ্বংসের সাক্ষী,

ওই চোখে ছায়া ফেলে পৃথিবীর সমুদয় রূপ
সুন্দর হ'তে তাকাও সুন্দরতরে,
আমার দৃষ্টি খাদ্য খুঁজেছে পাথরের খাঁজে, কয়লাখনির অন্ধকারে
পৌঁছে গেছি ধ্বংসস্তুপের তলায়
পূর্বপুরুষের দেহাবশেষ করেছি আবিষ্কার
তবু উল্লাস করেছি, খাদ্য আমাকে চেনে না
সে খুঁজেছে তোমাকে, তোমার মাংসল ঠোঁটে সে ধন্য,

নিজস্ব জমিনে ভীষণ ব্যক্তিগত চারটে দেয়ালের আড়ালে
তিলে তিলে গড়েছি নিজের সর্বনাশ
আশা-নিরাশার বৈপরীত্যে স্থিতিস্থাপক হয়েছে হৃদয়,
পরিত্যক্ত নগরীর জরাগ্রস্ত উরু বেয়ে নামতে নামতে
তোমায় কামনা করি,
যদিও চারপাশে শোভা পাচ্ছে অনাহারী আর মৃত মানুষের স্তুপ
প্রাচূর্যের পরাকাষ্ঠায় স্থবির জনপদ,
তবু চোয়ালে মাংসের ক্ষুধা, নাব্যতা কমে না
সে কী করে শেকলের বন্দীত্ব স্বীকার করে,

তথাকথিত আরোপিত দার্শনিকতা বিলুপ্ত
তোমায় কামনা করে আমি ফেরারী,
মহাকালের অনিবার্য কাঠগড়ায়
ধ্বংসের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা ঘোলাটে চোখ
বুঁজে আসে শপথের গুরুভারে,
সহস্র বৎসর ব্যবধানে তুমি আবার সভ্যতা গড়ো
আমি বারংবার ভুল ক'রে জন্মাই
খুঁড়ে চলি নিজস্ব কবর
শোষণে আহত হই
যুদ্ধে নিহত ।।

শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১০

সকালটা উঠলেই

সকালটা উঠলেই, রাতটাকে মনে পড়ে বড়ো বেশি
দুপুর বিকেল শেষে, সন্ধ্যেটা পাশে বসে
রাতটা উড়ে আসে ভালবেসে
তক্ষুণি মনে হয় সকালটাই ভালবাসি বোধহয়...

বারেবারে যে ফিরে আসে
তাকে মন কী করে ভালবাসে
যাকে চাই, যে আসেনা কখনই
তাকেই তো ভালবাসা যায়
ভালবাসা যায়

বড়ো বেশি রাত করে যে ঘুম নেমে আসে চোখের ঘরে
রূক্ষ দিনের মাঝে সূর্য ভীষণ বা
ভীষণ শীতের দেশে রাত্রিযাপন
পুরনো সে রেডিও বেজে চলে যদিও
এই কি বেশ নয়, জীবনের অপচয়
থেমে যাওয়া ঘড়িটাই বদলে দিচ্ছে গান
শেষমেশ বড়ো একা, নিরিবিলি টিকে থাকা
চুপ করে মরে যাওয়া
ঝরে যাওয়া
চলে যাওয়া

না সেঁজুতি, তুমি অন্য কারও... মেনে নেয়া অসম্ভব

আমি হয়তোবা নেই
তুমি তো আছ
তুমি কি মানতে না কখনই
আমিও ছিলাম,

যদিও ছিলনা বিশেষত্ব কোন
সেই বেঁচে থাকবার
তবু তো ছিলাম,

আমার দেখা সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত
হাতেগোনা, পাহাড়
দেখা হয়েছে একবার,
সাগর দেখিনি...
তবু তো ছিলাম,

তুমি তিলোত্তমা ছিলে, আজও আছ,
আমি কিছুই ছিলাম না
তবু তো জড়িয়েছিলাম...

এক জোছনায়, দুধ শাদা ফুল
তোমার খোঁপায় পরিয়েছিলাম...

ছিলাম, ছিলাম
নাই বা মানো আজও আছি ।।

এখন আমার জীবন যাপন (২৮ ডিসেম্বর, ২০০৯)

ক্যালেন্ডারটা হঠাৎ দেখি, চমকে উঠি
অনেকটা দিন ভালই আছি, ভালই লাগে
ঠোঁটের ডগায় তিতকুটে চা, না দুধ-চিনি
খামের ভেতর তোমার দেয়া দুটো লাইন,
বেশি কী আর জানতে লাগে, থাকতে ভাল
সহজ আছি, নিরূপদ্রব, সাদামাটা,
কিছুই তো নেই খরচ করার ছোট্ট এই জীবন ছাড়া,
হঠাৎ যদি একলা লাগে তোমায় ভেবে বাক্য বানাই,
পড়াশুনা ঠিক বুঝিনা, সুখের খোঁজে আর ছুটিনা
মাঝে মধ্যে একটু লিখি, যদি পারি
আর তাছাড়া ঘুরি ফিরি, মানুষ দেখি
কেটে যাচ্ছে সময় যে তার নিজের মতন ।

ভুলে ভরা ছড়া (২৫ ডিসেম্বর ২০০৯)

ভুলে আমার পিতা মাতা ভুল করেছেন
তাইতো আমি ভুল সময়ে জন্মেছিলাম
ভুল গায়েতে জড়িয়ে আমায় ভুল জামাটায়
আমার মাতা ভুল করে ভুল খাইয়েছিলেন,

ভুল শৈশব পার হয়েছি ভুল খেলনায়
ভুল স্কুলেতে ভুলভাবে ভুল পড়তে শেখায়
ভুল সন্ধ্যায় জ্বালিয়ে একা ভুল বাতিটায়
পিতার ভয়ে জোরে জোরে ভুল পড়াটায়
তবু বছর শেষের ভুলের পরীক্ষাতে
একটু ভুলে ভুলভাবে যে ফেল করেছি,

ভুল পাড়াতে সঙ্গে থাকে ভুল সাথীরা
পথের ধারের ভুল গাছেতে ভুল পেয়ারা
ভুল নদীতে ভুল সাঁতারে গোসল হত
ভুল পাহারে ভুল করে মন হারিয়ে যেত
ভুল বিকেলে ভালবেসে ভুল মেয়েটা
ভীষণ ভুলে ভাল্লাগেনা এটা-সেটা,

পড়াশোনার ভুল বোঝাটা নামার পরই
ভুল চাকুরীর ভুল শেকলে বন্দী হলাম
ভুল ফাইলে ভুল চেকেতে সইয়ের ভুলে
ভুল টেবিলে ভুল চেয়ারে আটকে গেলাম

ভুল বিবাহ ভুল রমণী ভুলের বাসর
ভুলের সাগর উথলে ওঠে সমস্ত ঘর
আমার ও তার মনের ভুলে ভুল যে হল
আমার শিশুও ভুল প্রভাতে জন্ম নিল
ভুল আদরে বাড়ল আমার ভুল ছেলেটা
ভুল দৃষ্টি চক্ষেতে ভুল চশমা আঁটা,

আয়না দেখি হচ্ছি বুড়ো ভুলের শরীর
ভুল টাকেতে ভুল চিরুনি ব্যামোদের ভীড়
হয়তো ঐযে ভুল সময়ে ভুলটা হবে
ভুল পৃখিবী ছেড়ে ভুলে মরতে হবে ।

বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১০

তবু বৈশাখ : ১৫ এপ্রিল ২০১০

আসে বৈশাখ
দহনে পোড়াতে জীবন
ঝড়ে উড়াতে ঘর
বরণে তবু তার কত আড়ম্বর
কত উচ্ছ্বাস, কত রঙ,
কত হীরেমন নীলাঞ্জনে লুটায়;
আলোকিত আধুনিকার বসনে সাংস্কৃতিক উৎসব,
আর পথকিশোরীর বসনে বাতাসের স্বাধীনতা -
শকুনের আনাগোনা,
পথের ধুলোতে থাকা নিরন্ন শিশুর -
চোখের পান্তায় ঘাই মারে রূপোলী ইলিশ, বারে বারে
তাই মেলার মাঠে বোতল কুড়োতে কুড়োতে তার হাত -
অজান্তেই চলে যায় ভদ্রলোকের পকেটে, আর প্রহার,
ভেতর - বাহির রক্তাক্ত তার;

বিবেকের অবশিষ্ট ক্লেদ হ'তে উঠে আসা -
সর্বশেষ স্লোগান, মিলিয়ে যায় ভোগবাদের হুংকারে,
তাদের শৈল্পিক নাটুকেপনায়
প্রধান অতিথি পহেলা বৈশাখ,
তবু বৈশাখ ।

সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০১০

কথন : ১২ এপ্রিল ২০১০

শব্দরা কেবল পালায়
ঘর ছাড়ি, ছাড়তে হয়
নেহাত এজন্যেই
ভাল্লাগেনা তোদের শহর আর
সভ্যতার উগ্র গন্ধ আমায় কাঁদায়,

পৌনঃপুনিক হোঁচটে
তোদের গড়া ইমারতগুলোয় হাঁ করে তাকানো -
মুগ্ধতার ভান করা,
তবে ঘাসফুল-গন্ধে মাতাল মনে মুগ্ধতা আসে না,
মুগ্ধতা মূলতঃ নেই,

বিলবোর্ডের স্তনে আধুনিকতার দুর্দান্ত উৎসব
তবু বড় রূক্ষ, বড় স্থূল এই যাপিত জীবন,
তোদের ভাবাতে, তোদের কাঁপাতে
প্রত্যেকের জন্য একটা ক'রে অশ্লীলতা চাই, তাই-
পয়মন্ত ভাবনারা অশ্লীলতা ছোঁবে,
ওদের হবে বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন -
দোহাই বুড়িগঙ্গার ক্লেদ
টের যেন না পায় কর্তৃপক্ষ -
ভাবনারা অশ্লীলতা বুঝুক
সস্তা সুখ চেটে নিতে শিখুক ।।

ধূমশলাকার পূজারী

আসুন, গল্প শুনুন
সীমাবদ্ধ একজন, ভাবনা অসীম
অস্থির দুখবিলাসী এক
ধূমশলাকার পূজারী,
ধোঁয়ার কুয়াশায়, তিনি -
হাঁটেন, হয়ে লুসিফর;
দুপুর আহার তার -
চৌকোণা দুটি রুটি
শেষে, তবু অবশিষ্ট আধেক,
ছেঁড়া খামে লিখে যান, সচেতন মস্তিষ্কে -
ঢালেন উত্তপ্ত চা, সদ্যোজাত কবিতায়;
এরপরও তিনি কবি এবং কবি ।

দৃষ্টিতে, তার আকাশে তাকানো মৃত -
পিষে যাওয়া ফুল, শুয়ে থাকা পাতা,
ধূমশলাকার লাশ...
রাত বড়ো ঘুমহীন, যাতায়াতময়,
সকাল মূর্ছিত, দুপুর জরাগ্রস্ত,
বেদনার বিকেল ছোটে উত্তপ্ত কবিতায়,
ভীনদেশী গানে, ধোঁয়ার ক্যালকুলাসে,
রীতিমতো ছেলেমানুষ, অ-বৈষয়িক,
তবু অনায়াসে তারে ভালবাসা যায়,
রাখা যায় হাত, তার সংবেদনশীল কাঁধে -
কেননা তিনি কবি এবং কবি
পাশাপাশি ধূমশলাকার পূজারী ।।

সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০১০

সমুদ্রবাড়ি (৫ এপ্রিল, ২০১০)

সমুদ্রবাড়ি যাব হেঁটে
সঙ্গে যাবে ক'খানা শীত আর বসন্ত
পাড়ি দিয়ে হাজার ক্রোশ মেঠোপথ, আলপথ
সমুদ্রবাড়ি যাব
পার হয়ে শত শত মাঠ, সর্ষেক্ষেত,
ধনেপাতা সুখ,
রাঁধাচূড়া ঝোপ,
সমুদ্রবাড়ি যাব
প্রতীক্ষায় কুমারী সৈকত;

সারি সারি ভুট্টার ক্ষেত, রূক্ষ শুষ্ক মাঠে
জড়োসড়ো হয়ে বাঁচে বিন্নি ধানের চারা,
কিষাণীর অশ্রু ছলকে মেশে ভোরের শিশিরে,
লাউয়ের মাচান হতে উঁকি দেবে কাঠবিড়ালের ছানা,
বাথানের মায়া ভুলে বাঁশিতে দরিয়ার ঢেউ তুলে
আকাশ ছোঁবে রাখাল,
এঁকে বেঁকে গ্রামের পর গ্রাম ধুয়ে
কলকল নদী আমার সঙ্গে
সমুদ্রবাড়ি যাবে,
ঘাটে ঘাটে তাই বাঁদিয়ার উৎসব;

সমুদ্রবাড়ি যাব,
চেটেপুটে নুনপানি শুভ্র ফেনার ঢেউ
গাভীন হবে কুমারী সৈকত,
গাঙচিল স্বপ্ন,
কচ্ছপ সাধ,
সমুদ্রবাড়ি যাব
গেলে যাক শীত-বসন্ত
যত খুশি, যত দূর ।।

রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১০

ভোগগ্রস্তের রূপোলী হারপুণ (৪ এপ্রিল, ২০১০)

কবি হলে আহার্য্য ছিল গনগনে রোদ্দুর
নিতান্ত মানুষ ওরা রোদ ভুলে ছায়াজুড়ে বিদ্যমান,
কবি হলে উপাখ্যান লিখে যেত দূর্বার প্রতিটি পৃষ্ঠায়
পরিপাটি দুঃখবোধ হতে মৃতজন পরিবৃত শহর
নিতান্ত মানুষ বলে নিভৃতে শীতল বাস্তুতে
বেশ্যার বিশ্বস্ত বাহুতে
ভীনগ্রহী ঈশ্বরীকে খুঁজে পাওয়ার ভান করে,
কবি হলে বেদনা কুড়োত এলোমেলো চুলে
নিতান্তই মানুষ তাই উল্লাসে মেতে সুখ খোঁজে
সীমিত অনুভূতিতে সংগীত নয়, ওরা শোনে সাইরেন;
কবির মস্তিষ্কে বিদ্রোহ
আর ওদের শরীরের গল্পে
জৈবিক চরণের নীচে লাল দাগ
দেয়ালিকাময় জমাট রক্তে মানুষের ইতিহাস,
সর্বনাশা প্রাচীন আগুন
ভোগগ্রস্তের রূপোলী হারপুণ ।।

বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ, ২০১০

প্রিয় নুরুন্নাহার (২৫ মার্চ ২০১০)

কিছুক্ষণ হল, গুঞ্জন থেমেছে কারখানার
পুরাতন কেরোসিনের গন্ধে বেলাশেষের ক্লান্তি
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ঘামে ভেজা শরীর
তবু ঘুম নেই,
তোমার আমার বোনা যৌথ স্বপ্নগুলোর ভবিষ্যত
আমাকে ভাবায়,
নিকোনো উঠোন, গাঁদাফুল-নয়নতারার ঝোপ
একটি বকুলগাছ, তোমার গায়ের গন্ধ
ভেসে আসে হাজার হাজার মাইল,
তুমি বোধহয় কাঁদছ...

বছর ঘুরে গেল
হালকা খবর আসে
ওইপাড়ে কিছু একটা হযে গেছে বড়সড়
যুদ্ধ বাঁধেনি তো...
আদৌ নিশ্চিত নই
চিঠিখানা তোমার হাতে পৌঁছুবে কিনা,
বুকের ভেতর চাপা ভয়
কি হবে জানিনা কিছুই,

রোজ সাইরেনের চিৎকারে ঘুম ছুটে যায়
মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্নেও... তারপর,
প্রতিটি দিন একই রকম, যান্ত্রিক, যন্ত্রণার,
ভাবনার শক্তিটাও চুরি যায় কখনও কখনও,
শেখ মুজিব কি পারবে...
দেশে ফেরার কোন পথ নেই
কিছু একটা হয়েছে বোধহয়..
বাবা-মা-বোনটা,
তুমি-আমাদের যৌথ স্বপ্নগুলো
সব কি আছে, জায়গামতোন...
সূর্য কি আলো দিচ্ছে আগের মতন ?

বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০১০

বেঁচে থাকার বৈধতা (২৪ মার্চ ২০১০)

একটি ভ্রূণের সাফল্যের পেছনে
চাপা পড়ে থাকে -
আরো অসংখ্য সম্ভাবনার মৃত্যু,
আর একটি শিশুর আগমনী আনন্দে
চাপা পড়ে যায় জন্মদাত্রীর যন্ত্রণা ;
কত যুদ্ধে, কত সংগ্রামে
রাশি রাশি দুঃস্বপ্ন পাশে ঠেলে
শুভ্র, সুন্দর, আর অর্থবহ কিছু স্বপ্ন নিয়ে
একটি শিশু সম্পূর্ণ মানুষ হয়,
আলাদা মানুষগুলো কাঁধে কাঁধ মিলায়
সভ্যতা গড়ে পৃথিবীতে, বাঁচে ;
তবু এই বেঁচে থাকার বৈধতা কতটুকু ।

পৃথিবীর স্থল - বায়ু - জল
যোগ্যতমের অধিকার,
ব্যর্থ এবং মৃতদের
দেহাবশেষের উপর দাঁড়িয়ে -
মানুষ বেঁচেছে, বেড়েছে, সভ্য হয়েছে,
সভ্য মানুষ পা ফেলল
নতুন নতুন সভ্যতার জন্ম দিল -
বিগত সভ্যতার ধ্বংসস্তূপের উপর,
কিন্তু তার চলার পথে
কখনও ঘাস জন্মাল না ।

সবুজ বন ছিল, বুনোফুল ছিল,
পাহাড় ছিল, তার গায়ে -
ঝরণা আর মেঘ ছিল,
আধুনিক মানুষের সঙ্গমে
পুড়ে গেল বনের পর বন
ধ্বংস হল পাহাড়ের পর পাহাড়,
গাঢ় নীল আকাশ
হয়ে গেল ধোঁয়াটে, বিষণ্ন,
পর্যাপ্ত দূষণে দূষিত আজ
পৃথিবীর স্থল - বায়ু - জল,
দূষিত আকাশ হতে বৃষ্টির মতন -
আগুন ঝরছে কেবল ।

ক্রমশঃ কোন হরিণ থাকবেনা
ক্রমশঃ কোন দোয়েল উড়বেনা
কখনও কোন শাপলা ফুটবেনা
বিষাক্ত স্রোতে আসবেনা বেড়াতে -
কোনদিন রূপোলি ইলিশ,
ধীরে ধীরে মৃত পৃথিবীর
জরায়ূ চিরে জাগবে প্রকৃতি
ফুঁসে উঠে গুঁড়িয়ে দেবে তাসের সভ্যতা,
হিসেব চাইবে কড়ায় গন্ডায়,
রূল জারি করবে -
আমাদের বেঁচে থাকা কেন অবৈধ হবেনা ।

রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০১০

জীবন অংক ভুল

হীরে মুক্তো নেই
তবু ডানপাশের কপাট টেনে
বাঁ পাশটা আড়াল করেছি,
জানলা ধারে উপাদেয় রোদ পাওয়া যেত
কিন্তু কোন জানলাই নেই,
তবু বাঁ পাশটা ঢেকে রাখি
কেননা খুলে দিলেই ধুলো আসে, মাছি বসে
এরপরও রঙিন একটা ঘুড়ি
একটা সাদা মোমবাতি
আর সামান্য একগাছা দড়ি,
সবাই বলেছে, তবু বলি -
হীরে-মুক্তো কখনও ছিল না,
তবে কষ্টগুলো ঠিকই ছিল
চাইনি, ওসবে মাছি বসুক...
তাই দড়িতে বেঁধে
ঈশ্বরের সিলিঙে
ঝুলিয়ে দিলাম পুরো বাড়িটাই ।।

সোমবার, ১ মার্চ, ২০১০

কইন্যা আর আড়িয়াল খাঁ

কহে আড়িয়াল খাঁ -
"অতটুকুন জল,
কইন্যা তোর সিনান হবে !
দ্যাখ, তোর ছায়ায় আমার
জল কেমুন তিরতির কইরে কাঁপে ।"

কইন্যা মানেনা, বেণী দুলাইয়ে
জোড়া ভ্রুঁ নাচাইয়ে তুফান তুইলে যায়
আড়িয়াল খাঁ'র বুকের মধ্যে হু হু বইয়ে যায়,

কইন্যা কহে -
"তোর বুকেই মইরব, দেখিস ।"

কড়্ড়ত কইরি বাজ পইড়ল আড়িয়াল খাঁ'র বুকে,
হা রে বিধির বিধি,
আঁকাবাঁকা কইন্যার আলো নিয়া
ফুইট্টা রইল জল,
আর মইরল আড়িয়াল খাঁ ।।

ইচ্ছেরা স্বপ্ন হবে

কিছু ইচ্ছেরা স্বপ্ন হবে বলে
ফুটে থাকা রূপোলী ফুলের গভীরে
আলোর সমুদ্রে
সাঁতরে এসেছে, স্বপ্ন হবে,
আংশিক আকাশ পর্যাপ্ত রক্তিম,
প্রাকৃত যন্ত্রণাকে একপাশে ঠেলে,
বিহ্বল কুয়াশায় বিপর্যস্ত অবয়ব -
ম্রিয়মাণ প্রত্যাশাকে উজ্জ্বল বারান্দার
‌আকাঙ্ক্ষিত প্রস্তাবে পুনর্জীবিত করা হবে;
সেই ইচ্ছেরা স্বপ্ন হবে,
হবে স্বল্পায়ু সুখসমূহ যূথবদ্ধ
পারস্পরিক চুম্বন এবং আলিঙ্গনে,
হতাশা এবং বীতশ্রদ্ধতার ফাটলগুলো
মিলিয়ে যাবে শিশির জমতে জমতেই,
আশ্চর্য এক সুখ বসে যাবে
বিষাদের ব্যক্তিগত উঠোনে;
প্রিয় ইচ্ছেরা স্বপ্ন হবে
তারপর ভেঙ্গে যাবে খানখান ।।

ঈশ্বরের পিঠাগাছ

অল্প একটু আকাশ তার
রুটিনমাফিক নেমে আসে রোদের সারস,
ব্যক্তিগত উঠোনজুড়ে কুয়াশার বিপরীতে
সম্পূর্ণ একা দাঁড়িয়ে সে
ছিঁড়তে থাকে কল্পনার নিষিদ্ধ গন্ধে
গর্ভধারণ করা স্বপ্নের ফুলগুলো,
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈষয়িকতাটুকু নিংড়ে
যেটুকু জল, তা বিকোয় নিজের কাছেই
বাণিজ্যিক বাতাসের প্ররোচনায়
সে ছুঁতে চায় অপেক্ষাকৃত উঁচুর অধিবাসী
উচ্চবিত্ত মেঘ,
তার অনুভূতির ঝিল টলোমল,
কেননা অসংখ্য উরু
ওসবের ভেতর দুঃখ এবং যন্ত্রণা
শরীরময় পিঠার অত্যাচার
ফুঁসে ওঠে নিজস্ব সমুদ্র,

ছোটখাটো পিঠাগাছ
থোকা থোকা ভালবাসা
কিন্তু কে নেবে -
ঈশ্বরের আসবার কথা ছিল, আসেনননি
উনি আসেননা ।

বুধবার, ২৪ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

দাম্পত্য

আমার পাশাপাশি চলমান তোমার পারফিউম এবং সেলফোন
আমার ছায়াটুকুও এখন নেই
তোমার রিবন্ডিং চুল, আমার উইগ
গোটানো আস্তিনে ভয়াবহ ধুলো
শহুরে গাছেদের অশ্রুর ফোঁটা নাগরিক ধুলোর সঙ্গে
পার্শ্ববর্তী রাজপথে যায়, সহবাস দেখবে বলে...
পিচ-ডানলপ-পাথর-গাঁদাফুল,
তোমার গেট টুগেদার পার্টি, জন্মদিন, প্রাথমিক নাগরিক বিজ্ঞান
বাসন্তী শাড়ী, রিক্সার চাকার চকচকে আঙ্গুল;
তোমার মানবিক বোধ আর জৈবিক পর্যালোচনার ত্রৈমাসিক সম্মেলন,
লোন করে কেনা জাপানী গাড়ি,
তোমার গোসল, ডিওডোরেন্ট, কন্ট্রাসেপটিভ...
আমার জুতোর ফিতে, গলার টাই, নটা-পাঁচটা
তার আশেপাশে চেপেচুপে রাখা
যৌথ এবং ভীষণ ব্যক্তিগত নানাবিধ স্বপ্ন...
বাজারের ফর্দ আর রান্নার রেসিপির মধ্যকার মৌলিক পার্থক্যটুকু;
আমাদের ক্রমবর্ধমান পারস্পরিক কূটনৈতিক সম্পর্ক,
বিছানায় ম্যাট্রেস, অন্তঃসারশূন্য আরামদায়ক অনুভূতি,
মাথার ভেতরে কোথাও আন্দোলন,
পৃথিবীর যাবতীয় যুদ্ধবিমানের চাপা আর্তনাদ,
এরপর লোডশেডিং, এরোসল, স্ট্রবেরি কনডম এবং সেলফোন
তারপর দুঃখ ।।

সোমবার, ১ ফেব্রুয়ারী, ২০১০

কেন শুধু আকাশ দেখতে চাও

কষ্ট পেলে আকাশ দেখ বুঝি
তোমার নিজস্ব আকাশ,
কেন শুধু আকাশ দেখতে চাও
আরো কত কি দেখার আছে

ওই মেয়েটিকে দেখ
ওর বাবা ছিলনা
তবু জন্মটা কোন রহস্যই নয়
বড়ও হয়ে গেছে হুট করে
উত্তরাধিকার সূত্রে প্রাপ্ত দায়
সে বয়ে যাচ্ছে খেটে
দিনের পর দিন
রাতের পর রাত
কেননা খেতে হয় কিছু ভাত
শেষ কবে ঘুরে ঘুরে আকাশ দেখেছে...

তবু ওকে সাজতে হয়
ঠোঁটের উপর রং লাগিয়ে
চুল বাঁধতে হয়
শরীর সাজাতে হয়
দেখাতে হয়...

তুমি শুধু আকাশ দেখতে চাও
নিজস্ব আকাশ,
তোমার মত করে জন্মালে
এতদিনে সেও স্বপ্ন বুনত, নানাবিধ
হয়ত থাকত একটা ভালবাসার মানুষও ...

আজ তুমি জড়িয়ে গেছ, আইনসম্মত
স্বাস্থ্যকর, এবং নিরাপদ শারীরিক সম্পর্কে,
ওর কিন্তু বাসর হয় প্রতিদিন, একাধিকবার
কতিপয় নষ্ট পুরুষ
ওকে কামড়ে কামড়ে খায়...

কষ্ট পাচ্ছ, আগুন বুঝি..
ওরও, বুকের মধ্যে একধরণের আগুন জ্বলে,
আলাদা আগুন, বুঝালেও বুঝবেনা তুমি,

ভীষণ কষ্ট পেলে আকাশে তাকাও,
মেয়েটিও কি তাকাতে চায়
তার নিজস্ব আকাশে ...

সোমবার, ৪ জানুয়ারী, ২০১০

সমান্তরাল

শীতল দীর্ঘ দেহ, শুয়ে আছি বহুকাল
সমান্তরাল,
নিষ্প্রাণ পাথরের ভীড়ে আধডোবা, দেখি
ঝিকঝিক আর্তনাদে
ক্ষণিকের তুফান উড়িয়ে, ছুটে আসে
ইস্পাতের ঘোড়াগুলি, মাঝে মাঝে
আমি ওদের বুঝি না,
চিনিনা কাউকেই,
কেবল মানুষ দেখি -
সাদা-কালো, হরেক রঙিন, মরচে ধরা
দেখি সাহসী কিশোর, উলঙ্গ শিশু...

আমার উপর দিয়ে
হাতে-হাত রেখে হেঁটে যায় প্রেমমগ্নরা, কত
চলে যায় এলোমেলো পথভোলা, কত
আমার উপর কাটা প'ড়ে
শুয়ে থাকে, ম'রে থাকে, কত
আরো অজস্র চলচ্চিত্র
এইসব দেখে থাকি,
মিশে থাকি ঘাস-মাটি-কাঁটাঝোপ,
প'ড়ে থাকি, দীর্ঘ শীতল, বহুকাল
সমান্তরাল ।।