শুক্রবার, ২৩ এপ্রিল, ২০১০

বৈপরীত্য (২৩ এপ্রিল ২০১০)

তোমার স্নানের জন্য অপেক্ষায় ছিল পৃথিবীর শুদ্ধতম জল
আর সহস্র বৎসর ব্যবধানে কোন জল নেই
তবু আমি সিক্ত নিজস্ব জলে,
শরীরের প্রতিটি অধ্যায়ে সাজিয়েছ এক একটি শিল্প বিপ্লব
এই দ্যাখো আমার গায়ের ক্ষতগুলো
এক একটি যুদ্ধ, এক একটি ধ্বংসের সাক্ষী,

ওই চোখে ছায়া ফেলে পৃথিবীর সমুদয় রূপ
সুন্দর হ'তে তাকাও সুন্দরতরে,
আমার দৃষ্টি খাদ্য খুঁজেছে পাথরের খাঁজে, কয়লাখনির অন্ধকারে
পৌঁছে গেছি ধ্বংসস্তুপের তলায়
পূর্বপুরুষের দেহাবশেষ করেছি আবিষ্কার
তবু উল্লাস করেছি, খাদ্য আমাকে চেনে না
সে খুঁজেছে তোমাকে, তোমার মাংসল ঠোঁটে সে ধন্য,

নিজস্ব জমিনে ভীষণ ব্যক্তিগত চারটে দেয়ালের আড়ালে
তিলে তিলে গড়েছি নিজের সর্বনাশ
আশা-নিরাশার বৈপরীত্যে স্থিতিস্থাপক হয়েছে হৃদয়,
পরিত্যক্ত নগরীর জরাগ্রস্ত উরু বেয়ে নামতে নামতে
তোমায় কামনা করি,
যদিও চারপাশে শোভা পাচ্ছে অনাহারী আর মৃত মানুষের স্তুপ
প্রাচূর্যের পরাকাষ্ঠায় স্থবির জনপদ,
তবু চোয়ালে মাংসের ক্ষুধা, নাব্যতা কমে না
সে কী করে শেকলের বন্দীত্ব স্বীকার করে,

তথাকথিত আরোপিত দার্শনিকতা বিলুপ্ত
তোমায় কামনা করে আমি ফেরারী,
মহাকালের অনিবার্য কাঠগড়ায়
ধ্বংসের আশ্রয়ে বেড়ে ওঠা ঘোলাটে চোখ
বুঁজে আসে শপথের গুরুভারে,
সহস্র বৎসর ব্যবধানে তুমি আবার সভ্যতা গড়ো
আমি বারংবার ভুল ক'রে জন্মাই
খুঁড়ে চলি নিজস্ব কবর
শোষণে আহত হই
যুদ্ধে নিহত ।।

শনিবার, ১৭ এপ্রিল, ২০১০

সকালটা উঠলেই

সকালটা উঠলেই, রাতটাকে মনে পড়ে বড়ো বেশি
দুপুর বিকেল শেষে, সন্ধ্যেটা পাশে বসে
রাতটা উড়ে আসে ভালবেসে
তক্ষুণি মনে হয় সকালটাই ভালবাসি বোধহয়...

বারেবারে যে ফিরে আসে
তাকে মন কী করে ভালবাসে
যাকে চাই, যে আসেনা কখনই
তাকেই তো ভালবাসা যায়
ভালবাসা যায়

বড়ো বেশি রাত করে যে ঘুম নেমে আসে চোখের ঘরে
রূক্ষ দিনের মাঝে সূর্য ভীষণ বা
ভীষণ শীতের দেশে রাত্রিযাপন
পুরনো সে রেডিও বেজে চলে যদিও
এই কি বেশ নয়, জীবনের অপচয়
থেমে যাওয়া ঘড়িটাই বদলে দিচ্ছে গান
শেষমেশ বড়ো একা, নিরিবিলি টিকে থাকা
চুপ করে মরে যাওয়া
ঝরে যাওয়া
চলে যাওয়া

না সেঁজুতি, তুমি অন্য কারও... মেনে নেয়া অসম্ভব

আমি হয়তোবা নেই
তুমি তো আছ
তুমি কি মানতে না কখনই
আমিও ছিলাম,

যদিও ছিলনা বিশেষত্ব কোন
সেই বেঁচে থাকবার
তবু তো ছিলাম,

আমার দেখা সূর্যোদয় কিংবা সূর্যাস্ত
হাতেগোনা, পাহাড়
দেখা হয়েছে একবার,
সাগর দেখিনি...
তবু তো ছিলাম,

তুমি তিলোত্তমা ছিলে, আজও আছ,
আমি কিছুই ছিলাম না
তবু তো জড়িয়েছিলাম...

এক জোছনায়, দুধ শাদা ফুল
তোমার খোঁপায় পরিয়েছিলাম...

ছিলাম, ছিলাম
নাই বা মানো আজও আছি ।।

এখন আমার জীবন যাপন (২৮ ডিসেম্বর, ২০০৯)

ক্যালেন্ডারটা হঠাৎ দেখি, চমকে উঠি
অনেকটা দিন ভালই আছি, ভালই লাগে
ঠোঁটের ডগায় তিতকুটে চা, না দুধ-চিনি
খামের ভেতর তোমার দেয়া দুটো লাইন,
বেশি কী আর জানতে লাগে, থাকতে ভাল
সহজ আছি, নিরূপদ্রব, সাদামাটা,
কিছুই তো নেই খরচ করার ছোট্ট এই জীবন ছাড়া,
হঠাৎ যদি একলা লাগে তোমায় ভেবে বাক্য বানাই,
পড়াশুনা ঠিক বুঝিনা, সুখের খোঁজে আর ছুটিনা
মাঝে মধ্যে একটু লিখি, যদি পারি
আর তাছাড়া ঘুরি ফিরি, মানুষ দেখি
কেটে যাচ্ছে সময় যে তার নিজের মতন ।

ভুলে ভরা ছড়া (২৫ ডিসেম্বর ২০০৯)

ভুলে আমার পিতা মাতা ভুল করেছেন
তাইতো আমি ভুল সময়ে জন্মেছিলাম
ভুল গায়েতে জড়িয়ে আমায় ভুল জামাটায়
আমার মাতা ভুল করে ভুল খাইয়েছিলেন,

ভুল শৈশব পার হয়েছি ভুল খেলনায়
ভুল স্কুলেতে ভুলভাবে ভুল পড়তে শেখায়
ভুল সন্ধ্যায় জ্বালিয়ে একা ভুল বাতিটায়
পিতার ভয়ে জোরে জোরে ভুল পড়াটায়
তবু বছর শেষের ভুলের পরীক্ষাতে
একটু ভুলে ভুলভাবে যে ফেল করেছি,

ভুল পাড়াতে সঙ্গে থাকে ভুল সাথীরা
পথের ধারের ভুল গাছেতে ভুল পেয়ারা
ভুল নদীতে ভুল সাঁতারে গোসল হত
ভুল পাহারে ভুল করে মন হারিয়ে যেত
ভুল বিকেলে ভালবেসে ভুল মেয়েটা
ভীষণ ভুলে ভাল্লাগেনা এটা-সেটা,

পড়াশোনার ভুল বোঝাটা নামার পরই
ভুল চাকুরীর ভুল শেকলে বন্দী হলাম
ভুল ফাইলে ভুল চেকেতে সইয়ের ভুলে
ভুল টেবিলে ভুল চেয়ারে আটকে গেলাম

ভুল বিবাহ ভুল রমণী ভুলের বাসর
ভুলের সাগর উথলে ওঠে সমস্ত ঘর
আমার ও তার মনের ভুলে ভুল যে হল
আমার শিশুও ভুল প্রভাতে জন্ম নিল
ভুল আদরে বাড়ল আমার ভুল ছেলেটা
ভুল দৃষ্টি চক্ষেতে ভুল চশমা আঁটা,

আয়না দেখি হচ্ছি বুড়ো ভুলের শরীর
ভুল টাকেতে ভুল চিরুনি ব্যামোদের ভীড়
হয়তো ঐযে ভুল সময়ে ভুলটা হবে
ভুল পৃখিবী ছেড়ে ভুলে মরতে হবে ।

বৃহস্পতিবার, ১৫ এপ্রিল, ২০১০

তবু বৈশাখ : ১৫ এপ্রিল ২০১০

আসে বৈশাখ
দহনে পোড়াতে জীবন
ঝড়ে উড়াতে ঘর
বরণে তবু তার কত আড়ম্বর
কত উচ্ছ্বাস, কত রঙ,
কত হীরেমন নীলাঞ্জনে লুটায়;
আলোকিত আধুনিকার বসনে সাংস্কৃতিক উৎসব,
আর পথকিশোরীর বসনে বাতাসের স্বাধীনতা -
শকুনের আনাগোনা,
পথের ধুলোতে থাকা নিরন্ন শিশুর -
চোখের পান্তায় ঘাই মারে রূপোলী ইলিশ, বারে বারে
তাই মেলার মাঠে বোতল কুড়োতে কুড়োতে তার হাত -
অজান্তেই চলে যায় ভদ্রলোকের পকেটে, আর প্রহার,
ভেতর - বাহির রক্তাক্ত তার;

বিবেকের অবশিষ্ট ক্লেদ হ'তে উঠে আসা -
সর্বশেষ স্লোগান, মিলিয়ে যায় ভোগবাদের হুংকারে,
তাদের শৈল্পিক নাটুকেপনায়
প্রধান অতিথি পহেলা বৈশাখ,
তবু বৈশাখ ।

সোমবার, ১২ এপ্রিল, ২০১০

কথন : ১২ এপ্রিল ২০১০

শব্দরা কেবল পালায়
ঘর ছাড়ি, ছাড়তে হয়
নেহাত এজন্যেই
ভাল্লাগেনা তোদের শহর আর
সভ্যতার উগ্র গন্ধ আমায় কাঁদায়,

পৌনঃপুনিক হোঁচটে
তোদের গড়া ইমারতগুলোয় হাঁ করে তাকানো -
মুগ্ধতার ভান করা,
তবে ঘাসফুল-গন্ধে মাতাল মনে মুগ্ধতা আসে না,
মুগ্ধতা মূলতঃ নেই,

বিলবোর্ডের স্তনে আধুনিকতার দুর্দান্ত উৎসব
তবু বড় রূক্ষ, বড় স্থূল এই যাপিত জীবন,
তোদের ভাবাতে, তোদের কাঁপাতে
প্রত্যেকের জন্য একটা ক'রে অশ্লীলতা চাই, তাই-
পয়মন্ত ভাবনারা অশ্লীলতা ছোঁবে,
ওদের হবে বুড়িগঙ্গায় বিসর্জন -
দোহাই বুড়িগঙ্গার ক্লেদ
টের যেন না পায় কর্তৃপক্ষ -
ভাবনারা অশ্লীলতা বুঝুক
সস্তা সুখ চেটে নিতে শিখুক ।।

ধূমশলাকার পূজারী

আসুন, গল্প শুনুন
সীমাবদ্ধ একজন, ভাবনা অসীম
অস্থির দুখবিলাসী এক
ধূমশলাকার পূজারী,
ধোঁয়ার কুয়াশায়, তিনি -
হাঁটেন, হয়ে লুসিফর;
দুপুর আহার তার -
চৌকোণা দুটি রুটি
শেষে, তবু অবশিষ্ট আধেক,
ছেঁড়া খামে লিখে যান, সচেতন মস্তিষ্কে -
ঢালেন উত্তপ্ত চা, সদ্যোজাত কবিতায়;
এরপরও তিনি কবি এবং কবি ।

দৃষ্টিতে, তার আকাশে তাকানো মৃত -
পিষে যাওয়া ফুল, শুয়ে থাকা পাতা,
ধূমশলাকার লাশ...
রাত বড়ো ঘুমহীন, যাতায়াতময়,
সকাল মূর্ছিত, দুপুর জরাগ্রস্ত,
বেদনার বিকেল ছোটে উত্তপ্ত কবিতায়,
ভীনদেশী গানে, ধোঁয়ার ক্যালকুলাসে,
রীতিমতো ছেলেমানুষ, অ-বৈষয়িক,
তবু অনায়াসে তারে ভালবাসা যায়,
রাখা যায় হাত, তার সংবেদনশীল কাঁধে -
কেননা তিনি কবি এবং কবি
পাশাপাশি ধূমশলাকার পূজারী ।।

সোমবার, ৫ এপ্রিল, ২০১০

সমুদ্রবাড়ি (৫ এপ্রিল, ২০১০)

সমুদ্রবাড়ি যাব হেঁটে
সঙ্গে যাবে ক'খানা শীত আর বসন্ত
পাড়ি দিয়ে হাজার ক্রোশ মেঠোপথ, আলপথ
সমুদ্রবাড়ি যাব
পার হয়ে শত শত মাঠ, সর্ষেক্ষেত,
ধনেপাতা সুখ,
রাঁধাচূড়া ঝোপ,
সমুদ্রবাড়ি যাব
প্রতীক্ষায় কুমারী সৈকত;

সারি সারি ভুট্টার ক্ষেত, রূক্ষ শুষ্ক মাঠে
জড়োসড়ো হয়ে বাঁচে বিন্নি ধানের চারা,
কিষাণীর অশ্রু ছলকে মেশে ভোরের শিশিরে,
লাউয়ের মাচান হতে উঁকি দেবে কাঠবিড়ালের ছানা,
বাথানের মায়া ভুলে বাঁশিতে দরিয়ার ঢেউ তুলে
আকাশ ছোঁবে রাখাল,
এঁকে বেঁকে গ্রামের পর গ্রাম ধুয়ে
কলকল নদী আমার সঙ্গে
সমুদ্রবাড়ি যাবে,
ঘাটে ঘাটে তাই বাঁদিয়ার উৎসব;

সমুদ্রবাড়ি যাব,
চেটেপুটে নুনপানি শুভ্র ফেনার ঢেউ
গাভীন হবে কুমারী সৈকত,
গাঙচিল স্বপ্ন,
কচ্ছপ সাধ,
সমুদ্রবাড়ি যাব
গেলে যাক শীত-বসন্ত
যত খুশি, যত দূর ।।

রবিবার, ৪ এপ্রিল, ২০১০

ভোগগ্রস্তের রূপোলী হারপুণ (৪ এপ্রিল, ২০১০)

কবি হলে আহার্য্য ছিল গনগনে রোদ্দুর
নিতান্ত মানুষ ওরা রোদ ভুলে ছায়াজুড়ে বিদ্যমান,
কবি হলে উপাখ্যান লিখে যেত দূর্বার প্রতিটি পৃষ্ঠায়
পরিপাটি দুঃখবোধ হতে মৃতজন পরিবৃত শহর
নিতান্ত মানুষ বলে নিভৃতে শীতল বাস্তুতে
বেশ্যার বিশ্বস্ত বাহুতে
ভীনগ্রহী ঈশ্বরীকে খুঁজে পাওয়ার ভান করে,
কবি হলে বেদনা কুড়োত এলোমেলো চুলে
নিতান্তই মানুষ তাই উল্লাসে মেতে সুখ খোঁজে
সীমিত অনুভূতিতে সংগীত নয়, ওরা শোনে সাইরেন;
কবির মস্তিষ্কে বিদ্রোহ
আর ওদের শরীরের গল্পে
জৈবিক চরণের নীচে লাল দাগ
দেয়ালিকাময় জমাট রক্তে মানুষের ইতিহাস,
সর্বনাশা প্রাচীন আগুন
ভোগগ্রস্তের রূপোলী হারপুণ ।।