বৃহস্পতিবার, ২৫ মার্চ, ২০১০

প্রিয় নুরুন্নাহার (২৫ মার্চ ২০১০)

কিছুক্ষণ হল, গুঞ্জন থেমেছে কারখানার
পুরাতন কেরোসিনের গন্ধে বেলাশেষের ক্লান্তি
আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে আছে ঘামে ভেজা শরীর
তবু ঘুম নেই,
তোমার আমার বোনা যৌথ স্বপ্নগুলোর ভবিষ্যত
আমাকে ভাবায়,
নিকোনো উঠোন, গাঁদাফুল-নয়নতারার ঝোপ
একটি বকুলগাছ, তোমার গায়ের গন্ধ
ভেসে আসে হাজার হাজার মাইল,
তুমি বোধহয় কাঁদছ...

বছর ঘুরে গেল
হালকা খবর আসে
ওইপাড়ে কিছু একটা হযে গেছে বড়সড়
যুদ্ধ বাঁধেনি তো...
আদৌ নিশ্চিত নই
চিঠিখানা তোমার হাতে পৌঁছুবে কিনা,
বুকের ভেতর চাপা ভয়
কি হবে জানিনা কিছুই,

রোজ সাইরেনের চিৎকারে ঘুম ছুটে যায়
মাঝে মাঝে দুঃস্বপ্নেও... তারপর,
প্রতিটি দিন একই রকম, যান্ত্রিক, যন্ত্রণার,
ভাবনার শক্তিটাও চুরি যায় কখনও কখনও,
শেখ মুজিব কি পারবে...
দেশে ফেরার কোন পথ নেই
কিছু একটা হয়েছে বোধহয়..
বাবা-মা-বোনটা,
তুমি-আমাদের যৌথ স্বপ্নগুলো
সব কি আছে, জায়গামতোন...
সূর্য কি আলো দিচ্ছে আগের মতন ?

বুধবার, ২৪ মার্চ, ২০১০

বেঁচে থাকার বৈধতা (২৪ মার্চ ২০১০)

একটি ভ্রূণের সাফল্যের পেছনে
চাপা পড়ে থাকে -
আরো অসংখ্য সম্ভাবনার মৃত্যু,
আর একটি শিশুর আগমনী আনন্দে
চাপা পড়ে যায় জন্মদাত্রীর যন্ত্রণা ;
কত যুদ্ধে, কত সংগ্রামে
রাশি রাশি দুঃস্বপ্ন পাশে ঠেলে
শুভ্র, সুন্দর, আর অর্থবহ কিছু স্বপ্ন নিয়ে
একটি শিশু সম্পূর্ণ মানুষ হয়,
আলাদা মানুষগুলো কাঁধে কাঁধ মিলায়
সভ্যতা গড়ে পৃথিবীতে, বাঁচে ;
তবু এই বেঁচে থাকার বৈধতা কতটুকু ।

পৃথিবীর স্থল - বায়ু - জল
যোগ্যতমের অধিকার,
ব্যর্থ এবং মৃতদের
দেহাবশেষের উপর দাঁড়িয়ে -
মানুষ বেঁচেছে, বেড়েছে, সভ্য হয়েছে,
সভ্য মানুষ পা ফেলল
নতুন নতুন সভ্যতার জন্ম দিল -
বিগত সভ্যতার ধ্বংসস্তূপের উপর,
কিন্তু তার চলার পথে
কখনও ঘাস জন্মাল না ।

সবুজ বন ছিল, বুনোফুল ছিল,
পাহাড় ছিল, তার গায়ে -
ঝরণা আর মেঘ ছিল,
আধুনিক মানুষের সঙ্গমে
পুড়ে গেল বনের পর বন
ধ্বংস হল পাহাড়ের পর পাহাড়,
গাঢ় নীল আকাশ
হয়ে গেল ধোঁয়াটে, বিষণ্ন,
পর্যাপ্ত দূষণে দূষিত আজ
পৃথিবীর স্থল - বায়ু - জল,
দূষিত আকাশ হতে বৃষ্টির মতন -
আগুন ঝরছে কেবল ।

ক্রমশঃ কোন হরিণ থাকবেনা
ক্রমশঃ কোন দোয়েল উড়বেনা
কখনও কোন শাপলা ফুটবেনা
বিষাক্ত স্রোতে আসবেনা বেড়াতে -
কোনদিন রূপোলি ইলিশ,
ধীরে ধীরে মৃত পৃথিবীর
জরায়ূ চিরে জাগবে প্রকৃতি
ফুঁসে উঠে গুঁড়িয়ে দেবে তাসের সভ্যতা,
হিসেব চাইবে কড়ায় গন্ডায়,
রূল জারি করবে -
আমাদের বেঁচে থাকা কেন অবৈধ হবেনা ।

রবিবার, ১৪ মার্চ, ২০১০

জীবন অংক ভুল

হীরে মুক্তো নেই
তবু ডানপাশের কপাট টেনে
বাঁ পাশটা আড়াল করেছি,
জানলা ধারে উপাদেয় রোদ পাওয়া যেত
কিন্তু কোন জানলাই নেই,
তবু বাঁ পাশটা ঢেকে রাখি
কেননা খুলে দিলেই ধুলো আসে, মাছি বসে
এরপরও রঙিন একটা ঘুড়ি
একটা সাদা মোমবাতি
আর সামান্য একগাছা দড়ি,
সবাই বলেছে, তবু বলি -
হীরে-মুক্তো কখনও ছিল না,
তবে কষ্টগুলো ঠিকই ছিল
চাইনি, ওসবে মাছি বসুক...
তাই দড়িতে বেঁধে
ঈশ্বরের সিলিঙে
ঝুলিয়ে দিলাম পুরো বাড়িটাই ।।

সোমবার, ১ মার্চ, ২০১০

কইন্যা আর আড়িয়াল খাঁ

কহে আড়িয়াল খাঁ -
"অতটুকুন জল,
কইন্যা তোর সিনান হবে !
দ্যাখ, তোর ছায়ায় আমার
জল কেমুন তিরতির কইরে কাঁপে ।"

কইন্যা মানেনা, বেণী দুলাইয়ে
জোড়া ভ্রুঁ নাচাইয়ে তুফান তুইলে যায়
আড়িয়াল খাঁ'র বুকের মধ্যে হু হু বইয়ে যায়,

কইন্যা কহে -
"তোর বুকেই মইরব, দেখিস ।"

কড়্ড়ত কইরি বাজ পইড়ল আড়িয়াল খাঁ'র বুকে,
হা রে বিধির বিধি,
আঁকাবাঁকা কইন্যার আলো নিয়া
ফুইট্টা রইল জল,
আর মইরল আড়িয়াল খাঁ ।।

ইচ্ছেরা স্বপ্ন হবে

কিছু ইচ্ছেরা স্বপ্ন হবে বলে
ফুটে থাকা রূপোলী ফুলের গভীরে
আলোর সমুদ্রে
সাঁতরে এসেছে, স্বপ্ন হবে,
আংশিক আকাশ পর্যাপ্ত রক্তিম,
প্রাকৃত যন্ত্রণাকে একপাশে ঠেলে,
বিহ্বল কুয়াশায় বিপর্যস্ত অবয়ব -
ম্রিয়মাণ প্রত্যাশাকে উজ্জ্বল বারান্দার
‌আকাঙ্ক্ষিত প্রস্তাবে পুনর্জীবিত করা হবে;
সেই ইচ্ছেরা স্বপ্ন হবে,
হবে স্বল্পায়ু সুখসমূহ যূথবদ্ধ
পারস্পরিক চুম্বন এবং আলিঙ্গনে,
হতাশা এবং বীতশ্রদ্ধতার ফাটলগুলো
মিলিয়ে যাবে শিশির জমতে জমতেই,
আশ্চর্য এক সুখ বসে যাবে
বিষাদের ব্যক্তিগত উঠোনে;
প্রিয় ইচ্ছেরা স্বপ্ন হবে
তারপর ভেঙ্গে যাবে খানখান ।।

ঈশ্বরের পিঠাগাছ

অল্প একটু আকাশ তার
রুটিনমাফিক নেমে আসে রোদের সারস,
ব্যক্তিগত উঠোনজুড়ে কুয়াশার বিপরীতে
সম্পূর্ণ একা দাঁড়িয়ে সে
ছিঁড়তে থাকে কল্পনার নিষিদ্ধ গন্ধে
গর্ভধারণ করা স্বপ্নের ফুলগুলো,
উত্তরাধিকারসূত্রে প্রাপ্ত বৈষয়িকতাটুকু নিংড়ে
যেটুকু জল, তা বিকোয় নিজের কাছেই
বাণিজ্যিক বাতাসের প্ররোচনায়
সে ছুঁতে চায় অপেক্ষাকৃত উঁচুর অধিবাসী
উচ্চবিত্ত মেঘ,
তার অনুভূতির ঝিল টলোমল,
কেননা অসংখ্য উরু
ওসবের ভেতর দুঃখ এবং যন্ত্রণা
শরীরময় পিঠার অত্যাচার
ফুঁসে ওঠে নিজস্ব সমুদ্র,

ছোটখাটো পিঠাগাছ
থোকা থোকা ভালবাসা
কিন্তু কে নেবে -
ঈশ্বরের আসবার কথা ছিল, আসেনননি
উনি আসেননা ।