বৃহস্পতিবার, ২০ মে, ২০১০

অসুখ - ০৩ (১৯ মে ২০১০)


কালো জামা পরা কিছু ছেলে আসে, ব্যস্ত কাক এবং কুকুর
আমি দেখি সব নষ্ট খেলনাগুলো আমার বারান্দায়
ওগুলো হয়তোবা কোনকালে ছিল রবোট কিংবা গাড়ি
এককালে আমিও ছিলাম, এককালে বড্ড বাচ্চা ছিলাম
আমি নষ্ট খেলনা বাসতামনা, ও যেমন আমায় বাসতনা
তবু ওকে চাইতাম মনের মধ্যে ক্ষুধা আর অসুখ নিয়ে ;

সাদা জামা পরা এক বুড়ো যায়, হাতে ময়লার ব্যাগ
তাতে রক্ত, মুরগির মুন্ডু, বেড়ালের বাচ্চার লাশ
বেড়াল দেয়াল ডিঙ্গোয়, আমিও কোনকালে হয়েছি বেড়াল
ও কখনও বেড়াল বাসেনা, তাই আর হলোনা
আমি বুঝিনা, কোন দুঃখে বেড়াল হলাম
আজো ওকে চাই শরীরের মধ্যে ক্ষুধা এবং অসুখ নিয়ে ।।

ডায়েরীর ছেঁড়া পাতাঃ ১৯ মে ২০১০


বড় বেশি দূরে থাকি, অথবা থাকি না
বচনের ভর বাড়ে ভাষাভিত্তিক ভালবাসায়
অপ্রিয় আর বাস্তব কিছু সম্পর্কের ডালপালা বিস্তৃত ক্রমাগত
সভ্যতার তলায় আরোপিত উল্লাসে বসবাস
এরপর আরো যত বাহ্যসর্বস্ব বিষয়াদি
সুখ না অসুখ, এ সংক্রান্ত অসুস্থ সংলাপ
বিশুদ্ধ শূন্যতা পলাতক, কেবল স্থূল সব দুঃখ
নিজের সঙ্গে প্রতারণা, একাকীত্বের মাতম

ভালবাসা কে কাকে বাসে, সে আরেক কৌতুক
আপাতত বায়ু চলাচল পর্যাপ্ত
নিজেকে সুখী বলে জোরালো দাবী তোলা যেতে পারে,
তবে প্রশ্ন, দাবী উত্থাপিত হবে কার উদ্দেশ্যে
আর বিপক্ষেই বা কারা ।।

বুধবার, ১৯ মে, ২০১০

কথনঃ ১৯ মে ২০১০

শহর বৃষ্টিহীন বহুকাল,
আকাশে পর্যাপ্ত মেঘ
তবু আজ বৃষ্টি নামবে না,

হাওয়া আসবে ঝোড়ো
সরল ছন্দিত স্পন্দনে
দু'এক ফোঁটা জলও ঝরবে
হয়তোবা ভুলে,

তবু আজ বৃষ্টি নামবে না
তবু আজ বৃষ্টি আসবে না ।।

বাইস্কোপ মানুষ (১৮ মে ২০১০)

সলতেতে আগুনের ছোট্ট শরীর
কাঁপতে কাঁপতে বলে, "আমি আর নেই বেশিক্ষণ.."
প্রত্যুত্তরে নীরব বাইস্কোপ মানুষ
কপালজুড়ে দুশ্চিন্তার অজস্র দাগ
আরো কিছু সময় বড়ো প্রয়োজন,
স্বপ্নের অবশিষ্ট পাতাগুলো গাঁথতে হবে
স্বপ্নবাক্সে বাঁধতে হবে অতিদ্রুত,
কেননা প্রদীপ নিভলেই রাত
মৌলিক অন্ধকার জোনাকবিহীন
বিষণ্ণ আর উপবাসী
পারিবারিক পরবর্তী দিন,
আর রাতের প্রশ্রয়ে
দারিদ্র্যের সঙ্গে আবশ্যিক সহবাস;

তবু বাইস্কোপ মানুষ স্বপ্ন গেঁথে যায়
গাঁথতে গাঁথতে চলে যায়
দেবতার কাছাকাছি, হঠাৎ
নুনপানি উঠে আসে কোত্থেকে যেন
সাথে আনে গান...
"কী চমৎকার দেখা গেল.. কী চমৎকার দেখা গেল.."

শুক্রবার, ১৪ মে, ২০১০

অসুখ - ০২ (১৪ মে ২০১০)

এখন নিভন্ত রাত বৈশাখের
যে আগুন একান্ত নারীর
তা খুবলে খেয়েছে অন্যপুরুষ
আর আমি অসুখে অ-সুস্থ,
নিজস্ব আঁধার পেরিয়ে
ছিল নরম জলের ঝিল
স্বপ্নবাগান,
সভ্যতার ক্ষুধার্ত চুম্বনে তা-ই
বহুতল বাণিজ্যিক ভবন
দূষিত লেকের গা-ঘেঁষে
আমি উদ্বাস্তু, উন্মাদ
ব্যাকরণে ব্যর্থ বারবার,

এ শহর
নর্দমা আর আস্তাকুঁড়ের যাদুঘর
আমার জন্য বরাদ্দকৃত নরক,
বিলুপ্তির আশংকায়
নৈসর্গকে ধরা হয়েছে সেলুলয়েডে
কেননা ব্যাপক মুনাফার সম্ভাবনা
বাহ্ বাহ্ ।।

কথনঃ ১৪ মে ২০১০

পরাজিত সৈনিক যেভাবে হাঁটে ঠিক সেভাবে
কেউ একজন বলেছিল পিছু হটা বারণ
সেরেব্রালে অসহ্য যন্ত্রণা,
বৃক্ষরা বৃষ্টি পেলে সুন্দর হয়
বেদনার মতন কালো কালো অক্ষরগুলো
বিকট চিৎকারে কোরাস গায়,
নির্মাণ না ধ্বংস, কার পক্ষে যাবে সভ্যতা ;

মানুষ দেখতে দেখতে
ক্রমাগত দেউলিয়া মানুষ ভালবেসে
যত বিদগ্ধ মানুষ ভালবাসা বোঝে
প্রবঞ্চক, প্রবঞ্চক এবং প্রবঞ্চক,
স্লিভলেস অশ্লীলতায় ভরপুর ভোগবাদ
বহুল ব্যবহৃত বাণিজ্যিক পণ্য,
জনগণ আড়চোখে দেখে ভাবে বিপরীত
কলম - কাগজের অস্বাভাবিক সংকট
কমে যাচ্ছে কবিতার শরীর ;

পরাজিত মানুষ যেভাবে বাঁচে অনেকটা সেভাবে
কে যেন বলেছিল ভাল থাকা বারণ
পাঁজরের অগোছালো কষ্ট,
বুড়ো বাড়িগুলোর ভাগ্যে অম্ল-বৃষ্টি
আবর্জনার রাজ্যে কালো কালো কাকবৃন্দ
গম্ভীর হয়ে আছেন,
প্রতিপত্তি না সুখ, কোনদিকে যাবে মানুষ ।।

একজন পাথর ভাঙ্গা শ্রমিক (১৪ মে ২০১০)

তিনি পাথর ভেঙ্গে থাকেন
বিছিয়ে দিয়ে কুচকুচে পিচ
পথ গড়ে দেন,
যোগাযোগ গাঢ় হয়
দেখতে দেখতেই
আমরা রূচিশীল, আধুনিক
আর সূর্যের উত্তপ্ত সহবাসে
জ্বলতে জ্বলতে তিনি বৃদ্ধ
চুলের সিঁথিতে পরিপাট্য নেই বহুকাল,
আমাদের ধর্ম, রাজনীতি, মূল্যবোধ
তিনি বুঝবেননা কোনদিন
কেবল ক্ষুধা আর দারিদ্র্য বোঝেন,
আমরা তো হরেক রঙে সাজাই শরীর
ভীষণ সভ্য আর উচ্চশিক্ষিত তাই
মেঘের গায়ে আবাস গড়ি,
উনার কেবল অসুখের ওষুধ হয় না
বউ ঘরে থাকে না
ছেলেটা চুরি করে, মেয়েটা হারিয়ে যায়
পরনে সুসভ্য বস্ত্র নেই বলে উনি লজ্জিত
আর আমরা কি দারুণ সভ্য
সচেতন মস্তিষ্কে গড়ি জীর্ণ বস্ত্রের ফ্যাশন,
চতুর্দিকে নানান ভাঙ্গন
রাস্তাঘাট, অবৈধস্থাপনা আর হৃদয়,
উনি দেখেন আর পাথর ভেঙ্গে যান
নোটিশবিহীন মৃত্যুর আগ পর্যন্ত ।।