বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০০৯

এই চিঠিটা মায়ের জন্যে

মাগো -
আমি তোমার খোকন
আমার ওপর অনেক রাগ, তাই না মা
বলেছিলাম ফিরব, পারলাম না...
এখন সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা
চিঠিটা যেন শেষ করে যেতে পারি,

ওরা অনেক চেষ্টা করল মা, পারল না...
গুলিটা এমন অজায়গায় লেগেছে
রক্ত আর থামছেই না, ওরা বলেছে -
শেষ রাত অবধি বাঁচলে ভাগ্য,

বলেছিলাম না মা,
দেশটা একদিন স্বাধীন হবেই...
আমি নেই তো কী হয়েছে
আরো কত লক্ষ লক্ষ সন্তান তোমার,

জানি মাগো -
চিঠিখানা পড়তে পড়তে
তোমার চোখের জল বাঁধ মানবে না,
কিন্তু লিখতে তো হবেই আমায়,

রক্ত অনেক লাল মা, তবু -
যুগে যুগে স্বাধীকারের জন্যে
মানুষ তার বুকের রক্ত দিয়েছে,
তবু মানুষ কেন মানুষকে খুন করবে...
মানুষ কেন মানুষকে বাঁচতে দেবে না...
কেন এক ভাইয়ের রক্তে আরেক ভাই
হাত রাঙাবে, তারা কেমন মানুষ...

তুমি আমার জন্মদাত্রী মা
এদেশ আমার জন্মভূমি মা
তাই তো যুদ্ধে এলাম
মা'কে মুক্ত করতে যুদ্ধে এলাম,
হায়েনার পালকে নিশ্চিহ্ন করতে
যুদ্ধে এলাম, বোনের অপমানের শোধ নিতে
যুদ্ধে এলাম, কিন্তু মাগো -
শেষটা দেখে যেতে পারলাম না ।

মাগো, কত্ত ভালবাসি তোমায়, জানো...
তুমি কাঁদবেনা বলো,
মাথা উঁচু করে হাঁটবে তুমি,
যে সন্তানেরা তাদের মাকে হারিয়েছে -
তাদের বুকে তুলে নেবে,
আমার ছোট্ট ভাইটিকে বলো...
তার ছেলে-মেয়েকে সে যেন -
আমার কথা, আমাদের কথা বলে,
ওরা যেন আমাদের মনে রাখে...
যে মেয়েটিকে
তুমি তোমার বউ বানাতে চেয়েছিলে,
তাকে বলো -
সে যেন আমায় ক্ষমা করে,

নতুন দেশের নতুন মাটিতে
আমার নামে
একটা দোপাটির চারা লাগিও,
আর তোমরা ভাল থেকো ।

বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৯

একাত্তরে আমার পিতা রাজাকার ছিলেন

আমার একজন পিতা আছেন
আমি তাকে আব্বা বলে ডাকতাম...
আমার খুব মনে আছে,
তিনি যখন কোরান পড়তেন -
সুবেহ সাদিকের স্বর্গীয় নীরবতার মধ্যে
তার কণ্ঠস্বর অদ্ভুতভাবে বেজে উঠত
তার সৌম্য অবয়ব হতে কোন এক
অন্য ভুবনের আলো ঠিকরে বেরুতে দেখতাম -
আমি, তখন ভুল শুনতাম
আমার দেখায় ভুল ছিল ।

আমার একজন আম্মাও ছিলেন
আমি তাকে কোনদিন হাসতে শুনিনি...
সারাটা বছর থাকতেন রোগাক্রান্ত
পর্দার আড়ালে দুর্বল, শীর্ণ, কালো
কোন গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে
আম্মার ফোঁপানো কান্নার শব্দ শুনতে পেতাম,
আমি তাকে বেশিদিন আম্মা ডাকতে পারিনি -
আমার বয়স যখন ছয়,
পিতা দ্বিতীয়বার বিবাহ করলেন...
কিছুদিন পর মারা গেলেন আমার আম্মা,
আমার আম্মা ...

আমার পিতার আরও তিন ছেলে ছিল
তাই বোধহয় তিনি আমাকে -
আদর করার মত যথেষ্ট সময় পাননি
নাকী আমি কালো ব'লে ভ্রু কুঁচকাতেন...
আজও জানি না,
একা একা বড় হয়েছি, খুব একা...

বয়স তখন উনিশ ছুঁই ছুঁই...
শেখ মুজিব মুক্তির ডাক দিলেন,
আগুন জ্বলা তার অনবদ্য ভাষণে...
আমার পিতা এই দেবতার মতন ব্যক্তিকে মোনাফেক, কাফের
এবং ইসলামের ঘোরতর শত্রু হিসেবে সাব্যস্ত করলেন,
পাকিস্তান.. পাকিস্তান.. মাতম শুরু করলেন
এপ্রিলের মাঝামাঝি, পাকসেনারা গ্রামে আসতে লাগল
আমার পিতার সেকী উচ্ছ্বাস,
ভীষণ তৎপর হয়ে উঠলেন তিনি...
পাকসেনাদের সামনে তিনি এমনভাবে গলে গলে পড়তেন যে -
ভ্রম হত.. তারা বোধহয় আল্লাহর পাঠানো ফেরেশতা...
এই ফেরেশতাদের ছিল পিশাচের মতন ক্ষুধা.
সব খেত ওরা, স-ব... যাকে সন্দেহ হত, গুলি করে মারত...
মেয়েদের ধরে ধরে খুবলে খেত...
এক দুপুরে পিতা, আমার ছোটখালাকে নিয়ে গেলেন -
পাকসেনাদের ক্যাম্পে, আমি তাকে আর কোনদিন দেখিনি...
আমার জগতটুকু ভীষণ এক আগুনে পুড়িয়ে দিলো কেউ...
আমি সেই রাতিই পালিয়ে গেলাম... যুদ্ধে গেলাম...

আমি তখন রংপুরের পথে,
লোক মারফত জানতে পারলাম -
মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের শাস্তিস্বরূপ
পিতা আমায় ত্যাজ্য ঘোষণা করেছেন,
আর এই মহান কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ -
পাকসেনারা তাকে আলবদর বাহিনীর কমান্ডার বানিয়েছে
আমার পিতা...

যুদ্ধের সেই দিনগুলো আজও চোখের সামনে জ্বলজ্বল...
রক্তের মহাসমুদ্র সাঁতরে আমার বাংলাদেশ স্বাধীন হ'ল ।

আট মাস পর.. ডিসেম্বরের আঠারো তারিখ..
গ্রামে ফিরলাম আমি,
দেখলাম আমাদের বাড়িটাকে পোড়ানো হয়েছে,
শুনলাম পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী, তিন পুত্র কেউ-ই আর বেঁচে নেই,
পিতাকে বেঁধে রাখা হয়েছে.. মেরে ফেলা হবে হয়তো...
পিতা আমায় দেখে চমকে উঠলেন...
তার সমগ্র শরীর কোন এক উচ্ছ্বাসে কেঁপে কেঁপে উঠছিল,
আমি পিঠ সোজা করে দাঁড়ালাম,
ভাবলাম মেরেই ফেলুক.. এই পশুটার শাস্তি হওয়া উচিত...
পরে আর পারিনি...

পিতা স-ব ভুলে গিয়ে আমায় গ্রহণ করতে চাইলেন
কিন্তু আমি তার কাছে আর ফিরে যেতে পারিনি...
আমি এখন এক সুতার কলে কাজ করি,
ভয় এবং দুশ্চিন্তার বিষয় এই, পিতা এখন
মস্ত এক নেতা হয়েছেন, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে
তার এখন বিলাসী জীবন...
মন্ত্রীও নাকি হয়ে যেতে পারেন সামনের নির্বাচনে...
কী করেছি আমি... কত বড় পাপ...
অপরাধবোধে, এখন নিজের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারিনা,
পারিনা...

আমার পিতা এখনও আছেন -
আমি ভুলেও তাকে আব্বা বলে ডাকিনা...

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসীদের হাতে নিহত ষাট লক্ষ পোলিশের উদ্দেশ্যে

যাবার মুহূর্তে আমার প্রেমিকা জিজ্ঞেস করছিল বার বার, আমি ফিরবো কি-না যুদ্ধ শেষে
ওই মুহূর্তে ওর চোখে ছিল কেবল ভয় আর অনিশ্চয়তা
লাইলাকের মতোন ওর হাতে রেখে আমার হাত, আমি হেসেছিলাম একটুখানি
সাহস কিংবা নিশ্চয়তা দেয়ার মত তেমন কিছুই পারিনি বলতে ।

আমরা তখন ডানজিনের পথে, হঠাৎ খবর পেলাম
নাযীরা ঢুকে পড়েছে ওয়ারশ-এ,
ওরা প্রতিটি বাড়ি, দোকান, ইমারত, স্কুল, সরাইখানা ডিনামাইটে উড়িয়ে দিয়েছে
আমার পরিবারের সবাইকে, আমার প্রেমিকাকে ধরে নিয়ে গেছ আউসভিৎসে,
নাযীদের ট্যাংকগুলো যখন পশ্চিম সীমান্ত বিদীর্ণ করছিল
আমাদের পোমোরস্কা ভাইয়েরা তখন ঢাল আর তলোয়ার নিয়ে
কামানের সামনে দাঁড়িয়েছিল নিশ্চিত মৃত্যুকে মেনে, বুক পেতে;
ডানজিন বন্দরে আমরা একশো উননব্বইজন সহযোদ্ধা
নাযীদের শ্লেসুইটগ হরস্টিনকে আটকে রেখেছিলাম টানা সাত দিন,
তবু হয়নি শেষ রক্ষা -

এক মাসের মধ্যে, শুধু ওয়ারশ-এই শহীদ হল আমাদের আড়াই লক্ষ সহযোদ্ধা...
তিন মাসের ভেতর আমাদের মাতৃভূমিকে ওরা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করলো...
আমাদের পিতা, মাতা, ভাইকে গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মারা হল..
বিষাক্ত গ্যাসের ভেতর একটু নিঃশ্বাসের জন্য আঁচড়ে কামড়ে পাহাড় হ'য়ে থাকা
লাশের স্তুপের উপর আমার প্রেমিকার মুখটা হয়তোবা ফুটে ছিলো কোনো নীল পদ্মের মত...

আমাদের ষাট লক্ষ প্রাণের দামে যে অভ্যুত্থান এলো, তা ব্যর্থ হলো...
সোভিয়েতরা এগিয়ে এলোনা আমরা কমিউনিস্ট নই বলে,
এই বর্বরতাকে ওরা মুছে দিতে চাইলো ইতিহাসের পাতা থেকে,
আমাদের এই ত্যাগ তবু যাবে না মুছে কোনদিন-
মাতলোয়া আর ভিসতুলার শপথ,
ভবিষ্যতের পোলিশদের মনে গাঁথা থাকবে, তারা মনে রাখবে...
নাযীরা হন্তারক আর সোভিয়েতরা বিশ্বাসঘাতক
আমরা ষাট লক্ষ শহীদ, মিশে থাকবো
ওয়ারশ, সাপুত, গিদানস্কের জলে-স্থলে-বাতাসে
বেঁচে থাকবো আমাদের উত্তরসূরীদের অন্তরে...
বয়ে যাবো তাদের ধমনীতে-শিরায়-উপশিরায়...
অনন্তকাল ।।




টীকাঃ-
ডানজিন - জার্মানীর একটি নৌবন্দর
নাযী - নাৎসী (হিটলারের সৈন্যবাহিনী)
ওয়ারশ - পোল্যান্ডের রাজধানী
আউসভিৎস - নাৎসীদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প
পোমোরস্কা - অশ্বারোহী সৈন্যদল (ব্রিগেড)
শ্লেসুইটগ হরস্টিন - জার্মান রণতরী
মাতলোয়া ও ভিসতুলা - পোল্যান্ডের দুটি প্রধান নদী
সাপুত ও গিদানস্ক - পোল্যান্ডের দুটি প্রধান শহর

সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০০৯

আমি একটা শূন্য খাম

(৫মে,২০০৭)

ইচ্ছে করে একটি খাম পাঠাই
তোমার কাছে...
হয়তো একদিন পাঠাবো,
কোন এক সকালে তোমার ঘরের দরজা খুলে
হঠাৎ আবিষ্কার করবে খামটি
অবাক হবে... ভাববে কোত্থেকে এলো,
হলুদ একটা খাম,
তার উপরে বড় বড় অক্ষরে তোমার নাম,
প্রেরকের নাম নেই,
তোমার ভ্রু কুঁচকে যাবে, সেই ভ্রু...
যে পরিমাণ বিরক্তি নিয়ে খামটা খুলবে,
খোলার পর সেটি দ্বিগুণ হবে, কেননা
খামের ভেতর কিছুই নেই, জানি
তখ্খুনি খামটাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে..
জানালার বাইরে, বহু দূরে...
আমি তখন প্রচন্ড রোদের মধ্যে,
মানুষের ভীড়ে হারিয়ে গেছি...
শূন্য একটা খাম..
আমার নবতম সংস্করণ ।।

কবিতাগ্রস্ত

(০১অক্টোবর,২০০৮)

কবি হবার ইচ্ছে ছিলনা,
কবিতা আমায় ধরলও না,
তবু কেন একটু একটু কষ্ট লাগে...

জারুলপোকায় খেয়ে গেছে, বুকের অনেকখানি
বাকীটুকু নির্বেদ... জ্যোৎস্নায় কিংবা অমাবস্যায়
স্বপ্নঘোর প্রহর শেষে,
অন্ধকারের ব্যবচ্ছেদে,
আবছা আকাশের ছায়ায় খুঁজে পাই-
উইপোকায় কাটা সেই রাতের ডায়েরীটা...

যে নদীর জল ছুঁতে পারিনি কোনদিন
যে পাহাড় অপেক্ষার, তার পাইনি কোন খোঁজ
তার হরেক রঙিন সুখ
আঁচড় কেটে গেছে
ছায়া ফেলে গেছে, সকরূণ রোদ্দুর ।।

অন্য পৃথিবী

(৩০মে,২০০৭)

দেখলাম, সূর্যটা ডুবে গেল...
সব বুনোহাঁস মারা পড়ল...
আর্তনাদ করে উঠল বিপন্ন ডাহুক,
পৃথিবীটা অন্য রকম,

রাত্রি অন্ধকার, খালবিল ভ'রে ওঠে
গর্ভবতী মাছেদের মৃতদেহে...
শ্বাপদের দল, খুবলে খাচ্ছে হরিণশাবকের বুক...
ঈশ্বরের গলিত লাশের উপর শকুনের চিৎকার... হাহাকার
কাউকে চিনছেনা না কেউ, কোনদিন চিনবেনা
সবাই উল্লাসে মেতে - হত্যা,খুন,জখমে...
যুগ থেকে যুগান্তরে ।।

কবিতা - কষ্ট - বৃষ্টি

(০৮এপ্রিল,২০০৬)

সাদা কাগজের ওপর কিছু শব্দকে নিয়ে খেলছি..
এভাবেই সময়গুলো বেশ কেটে যায়,
আজকাল নিজের সাথে কথা বলতে শিখেছি -
যেহেতু আমার আর কেউ নেই,
একা থাকার কষ্টটা নয়
একা থাকার লোভটাই বোধহয়
ভালো থাকার সব উপাদান বাষ্পীভূত করে দেয়..
সৃষ্টিছাড়া জঘন্য এক মাথার অসুখ বাঁধিয়েছি,
দেই-দিচ্ছি করেও বহুকাল ভালো করে ঘুমোইনি...
আদৌ কি বেঁচে আছি...

বিষয়-আশয় যা ছিল সব ছুঁড়ে ফেলে
পুড়িয়ে দিয়েছি যাবতীয় সুখ..
এরপরও কখনও কখনও পেছনে তাকাই,

ভাবালুতায় বজ্রেরা কানামাছি খেলে..
তারপর, বলা নেই কওয়া নেই
ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি নেমে পড়ে ।।

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৯

আমি ভালবাসা বুঝিনা

তুমি তবু ভালবেসেছিলে
আমি তো তাও পারিনি
কারণ আমি ভালবাসা বুঝিনা আজও

একসময় ভাবতাম চোখে চোখ রেখে 'ভালবাসি'
বললেই বুঝি ভালবাসা হয়,
তাই তো দেখতে চেয়েছি তোমার চোখ..
চোখে চোখ পড়ার পর কী যে হলো..
কিছুই বলতে পারলাম না, তবুও বলতেই হবে...
চোখ বন্ধ করে কানে কানে বলে দিলাম..
তাও বোধহয় উচ্চারণে ভুল হলো...

প্রথম যেদিন হাত ধরলাম, সেদিনও বলতে পারতাম..
কিন্তু সঙকোচের ভারে ঐদিনও পারলাম না...
তার বদলে বললাম "বেশ নরম তো তোমার হাতটা"..
কী হাস্যকর...

প্রথম চুমু খাওয়ার পরও 'ভালবাসি' বলা যেত...
অথচ আমি কি করেছিলাম...
চোরের মতন এদিক ওদিক তাকিয়েছি...
মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে, "কেউ দেখেনি তো.."

আজ যখন তোমার আর আমার মাঝখানে কিছু নেই...
মানে আমিই শেষ করে দিয়েছি... তখনও
জোর দিয়ে বলতে পারিনা.. তোমায় সত্যি ভালবাসতাম..
মুঠোফোনেও না...

তবু তো তুমি সত্যি ভালবেসেছিলে..
আমি তো ভালবাসা বুঝিই না... বাসবো কী করে...

ঞরূদ

তোমার চুলে বুঝি সূর্য নিভে যাবে
তবু এস, চুলের গন্ধ নেব আমি ...
তোমার হাত ধরতে হবে অতি শীঘ্রই
তোমার চোখে চোখ রাখা দরকার
কেননা, তোমায় বড়ো প্রয়োজন
অতঃপর ঞরূদ, সবই তোমার আমার যা কিছু...
ঞরূদ... ঞরূদ... ঞরূদ...
আকাশ আর মাটি মিশে যাবে, তো...
তবুও এসো, আসতেই হবে...

তুমি আসছনা বলে, কিছু ভাবা যাচ্ছে না,
মারাত্মক স্থবিরতার মধ্যে আছি...
ভয়াবহ শূন্যতা ।।

ডায়েরির ছেঁড়া পাতা ; ২৮ নভেম্বর ২০০৯

আমার আরোপিত একাকীত্বকে ছিঁড়ে ফেলে, কিছুক্ষণ আগে
স্টীলের বাটিতে গরম দুধ দিয়ে গেছেন আমার আম্মা, তাকিয়ে দেখেছি
বাটি-চামচ-সাদা গরম দুধের ধোঁয়া পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠেছে ওপরে...
তারপর বাতাসের সঙ্গে মিশে গিয়ে এক অদ্ভুত গল্প ... এই মুহুর্তে
ধোঁয়াটা বড়ো বেশি সূক্ষ্ম, খুব ভাল করে খেয়াল না করলে দেখাই যায় না,
দুধটা এখনও বেশ গরম.. অপেক্ষা করছি... আপাততঃ খাচ্ছিনা...

দুধ কেন খাবো.. দুধ খেলে কী হয়...
আম্মা কলের ধারে.. বাসন মাজছেন.. কলের হাতলে ধাক্কা মারছেন..
সেই আওয়াজটা অন্যরকম একটা কান্নার শব্দের মতন শোনাচ্ছে...

এখন একাকীত্ব জাপটে ধরেছে আমায়.. আরোপিত নয়.. সহজাত...
তাই কেমন একটা দমবন্ধ করা অনুভূতি... খারাপ বা কষ্ট লাগার কাছাকাছি...
দুধ খেতে ইচ্ছা করছে না.. তবু গিলতে হবে... ধূর...

আমাকেই বলছি

চাওয়া আর পাওয়ার হিসেবটা এখ্খুনি করে ফেলোতো...
প্রাপ্তির লিস্টিটা প্রথমে করো...
প্রথমে রাখো জন্ম (ওইটাই সবচে' বড় প্রাপ্তি এযাবৎ),
এরপর জন্মপরিচয়, বোন, আত্মীয়স্বজন..
মা-বাবা-বোনের স্নেহের কথা ভুললে অন্যায় হবে, ঢের পেয়েছে..
এক জীবনের জন্য যথেষ্ট... আরও চাও...
ছোট্টবেলায় খেলনা পেয়েছ অনেক, যদিও খেলাধূলা তেমন একটা করনি..
পড়াশোনায় মাঝামাঝি ছিলে.. কই, বেদনার স্মৃতি তো নেই স্কুল নিয়ে,
বন্ধু-বান্ধব তেমন একটা ছিলনা.. চাইতেও না তেমন,
বন্ধুহীন বিশেষণ টাকে বেশ তৃপ্তির সাথেই নিতে, অদ্ভুত...
তবুও তো কত্ত ভাল ভাল বন্ধু পেয়েছ..
ক'জনের ভাগ্যে এমন ভাল বন্ধু জোটে, বলো..
দেশের স'বচেয়ে ভাল প্রতিষ্ঠানে ভাল একটা সাবজেক্টে পড়াশোনা করছ..
এরাই তোমার এযাবৎ বড় বড় প্রাপ্তি.. কম কী..
অনেক.. অ-নেক ভাগ্যবান তুমি বুঝলে, দেখো...
প্রাপ্তি লিস্টিটা কত্ত বড়ো.. হুমম...

এবার দেখা যাক কী কী পেলে না (এযাবৎ যা চেয়েছ অথচ পাওনি)
হুমম.. গান শিখতে চেয়েছিলে.. পারনি.. বাহ্... তোমারই তো দোষ..
এই.. বাবাকে দোষ দেবে না খবরদার... তুমি আলসেমি করেছ.. কুণ্ঠিত থেকেছ...
যাও... এটা অপ্রাপ্তি বললে ভুল হবে... শুধু তাই না অন্যায় হবে..
চলো চলো.. তারপর.. অ.. কমন আপসেট.. লাভ ফ্যাক্টর.. হা হা হা..
রীতু.. হা হা হা... এই ওটা ছ্যাকা নয় বৎস.. মনে নেই ক্লাস সিক্সের ঘটনা..
মেয়েটাকে কীভাবে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছিলে.. ছিঃ... জানো..
এটা কতবড় অন্যায়.. কতবড় পাপ... ও কোন হিসেবে তোমার হাত ধরবে...
তুমি ভাব কী করে আশ্চর্য.. ছিঃ ছিঃ.. আর তুমি সবাইকে কী বলে বেড়াচ্ছ...
উল্টো বলেছ.. নিজেকে সাধু বানিয়েছ.. হায়রে সাধু... আর কত ভাল সাজবে..
স্বীকার করে নাও তুমি পাপী...
তারপর বন্ধুত্বের দূর্বলতার সুযোগ নিলে আরেক কন্যার.. লজ্জার মাথা খেয়ে
প্রেম নিবেদন করলে.. তাও আবার এসএমএস-এ...
কী নাটক.. ভান করলে ওটা তামাশা.. কতটা লুসার তুমি,
পরে ঠিক ঠিক স্বীকার করলে..হাহ্.. তারপর.. ছন্দাকে কেমন ক'রে ঠকালে..
কী ভেবেছ.. ও তোমায় কোনদিন ক্ষমা করবে.. কখ্খনও না..
যদি করেও সেটা ওর মহত্ত্ব.. তুমি কোনভাবেই তার যোগ্যতা রাখনা...
শোনো.. ভালবাসা জিনিসটা পাওয়ার সকল যোগ্যতা তুমি হারিয়েছ...
দেখতেও কি বিচ্ছিরি তুমি.. ওয়াক... প্লিজ বাদ দাও এসব...
দেন... যণ্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট, বিষাদ.. ব্লা ব্লা ব্লা... আরে.. এসব তো প্রাপ্তি...
আরে গাধা, এসব সবারই থাকে.. স্যাডিস্ট হতে চাও, না... আত্মপ্রতারক...
তোমার কি কোন সাহস আছে... যা-হোক .. অন্য কিছু বলো...
কী.. মৃত্যু চাও... হা হা হা ... ভন্ডামি রাখো... ও যদি সত্যি আসে না...
তোমার যে কী অবস্থা হবে জানা আছে.. দৌড়ে কূল পাবে না, বুঝলে.. ভন্ড...
যে বন্ধুটা বেঁচে আছে, কী অবলীলায় তাকে মৃত বানিয়ে দিলে... হায়রে..
একটিবারও অসুস্থ বন্ধুটাকে দেখতে গেলে না...
খোঁড়া সব অজুহাত নিয়ে ব'সে আছ... আরে গর্দভ, নিজেকেই ঠকাচ্ছ..
তুমি আবার কবিতা ভালবাসো.. না.. কীভাবে আশা করো কবিতাকে...
একটা ঠগ, প্রতারক, মিথ্যেবাদী কখ্খনও কবিতা ভালবাসতে পারে না...
মানুষের কাছ থেকে করূণা ভিক্ষে করে চেটেপুটে খাও তুমি..
আচ্ছা.. কবিতা যখন আবৃত্তি কর (তোমারটা আবৃত্তি হয় না).. তখন কি
একটুও মনে পড়ে না ছন্দার কথা.. খারাপ লাগে না একটুও.. এতটা লম্পট তুমি..
কবিতা যখন লেখার ভান কর (কোনদিন কবিতা হবে না ওসব)... তখন
অসুস্থ বন্ধুটার কথা মনে পড়ে না.. যাকে মনে মনে মেরে ফেলেছ...
না... আর কিছু বলার নেই.. যথেষ্ঠ হয়েছে...
এবার বলো... প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব মেলানোর
কোন যোগ্যতা কি আর আছে তোমার... অবশেষ...
ভন্ডামি বাদ দাও... ঢের পেয়েছ...আর কী চাও...
এই হিসেবটা জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে আবার করবে ...
মাঝখানে আর করো না.. অর্থহীন কাজ...
এখনও সময় আছে... প্রায়শ্চিত্ত কর.. প্রায়শ্চিত্ত কর...
অভিশাপ বহন করার মতোন শক্তি বা সাহস কোনটাই তোমার নেই ।।

সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০০৯

গন্তব্য ; একটি যৌক্তিক মৃত্যু

বিশুদ্ধ একাকীত্বের চাদর পরনে কিছু জীব
মহাকালের কুয়াশাচ্ছন্ন চৌরাস্তায় এসে একটু দাঁড়ালো,তাকালো
প্রথমে ডানে, তারপর বামে, আবার ডানে
রাস্তার ধারে সারি সারি মানবতার ল্যাম্পপোস্ট, কোনও কোনটা বিকল..
অনেক উপরে অন্ধকার, তারা যাকে আকাশ নাম দিয়েছে
দেখা যাচ্ছে না, তবুও তারা ভেবে নিচ্ছে -
তমসা ফুঁড়ে কিছু আলোকবিন্দু তখনও জ্বলজ্বল,ব্যস ওইটুকুই...

যেহেতু পেছনে ফেরা যায়না, তারা এগিয়ে যায় অনন্যোপায়
গন্তব্য ; একটি যৌক্তিক মৃত্যু,
চলতি পথে উষ্ণতার প্রয়োজন পড়বে
একটু পর পর গজিয়ে ওঠা স্টল থেকে ওরা
কয়েক কাপ কড়া প্রত্যাশায় চুমুক দেবে
তারপর আবার হেঁটে যাবে, প্রতিবন্ধকতায় হোঁচট খাবে
ক্লান্তি উড়ে আসবে, গায়ে এসে পড়বে
তবু ওরা এগিয়ে যাবে, ইতিহাস পায়ে মাড়াবে,
প্রত্যেকের কাঁধে এক বোঝা দায়ভার
যার বোঝা যত কম হবে, তার মৃত্যু তত যৌক্তিক আর অর্থবহ হবে
চলনসই একটা মৃত্যু গড়ে নিতে, ওরা সব করবে, স-ব...

পথে চোখে পড়বে আরো অনেক জীব, অসংখ্য, অগণিত
হেঁটে যাচ্ছে গা ঘেঁষে, একটু তফাতে, যেন মিছিলের পর মিছিল,
মাঝে মধ্যে চোখে চোখ পড়ছে, ওরা হাসছে,
ছোট্ট ছোট্ট আলাপচারিতায় মেতে উঠছে,
যে যার কথা বলেই চলেছে, মূলতঃ শুনছে না কেউই.. নাকি শুনছে
শব্দগুলো ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে..

কেউ কেউ আবার হঠাৎই গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে
আগ্রহ নিয়ে তাকাচ্ছে কেউ কেউ ..
ওরাও বুকের মধ্যে স্বপ্ন গুঁজে হেঁটে যাচ্ছে,
একটি সুন্দর মৃত্যু, এর থেকে আর সুন্দর কী হতে পারে ।।

মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০০৯

নারীর নয়; বরং চায়ের ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে ইচ্ছে করি

অন্যান্য পথে আমি হেঁটে যাবো এইবার
পথ থেকে তোমাদের সুখ কুড়োবার
শখ শেষ
সব শেষ

একা বেঁচে ঈশ্বর হবো
বুক থেকে ছড়িয়ে দেবো
সোনা রঙ
যত রঙ

একদিন সময় করে
আকাশটা বুকে ধরে
সুর্যকে কামড়ে খাবো
তারপর ভুলে যাবো

এইবার মিশে যাই

ঘাসের মধ্যে মিশে যাই...
ধুলোর মধ্যে মিশে যাই....
আকাশ চেরা আগুন দেখি...
নতুন কুঁড়ির স্বপ্ন বুকে...
কোন গাছেদের নিদ্রা ভাঙে...

এই পৃথিবীর অন্য অন্য স্বপ্নচারী...
স্বপ্ন বানায় রঙবাহারী...

ডেকে ফেরে জলের মানুষ...
আসল মানুষ...
অদ্ভুত এক কুয়োর ভেতর..

অচেনা কোন্ স্বপ্নকিশোর...
গল্প দেখে... আকাশ লেখে...
আমি যেমন ঢেউ দেখিনি...
পাহাড়চূড়োর রূপ বুঝিনি... সুখ খুঁজিনি...
খুঁজতে খুঁজতে কেবল ধুলো... কেবল ঘাসে...
যাচ্ছি মিশে...
অভ্যস্ত দীর্ঘশ্বাসে...

সোমবার, ২৩ নভেম্বর, ২০০৯

কারমেন এবং রাজহাঁস

এ হচেছ কারমেন এবং রাজহাঁস
রাত গাঢ় হলে হণ্টন এদের স্বভাব
চাঁদের শরীর থেকে অতৃপ্ত আলোগুলো
যখন পুরনো দেয়ালগুলোকে ছাড়তে আর ধরতে থাকে, তখন
নিয়নের অপরূপ ধোঁয়ার ভেতর হাঁটতে থাকে ওরা
কারমেন এবং রাজহাঁস...

অন্ধকারের সুতোয় গাঁথা আছে
এখানে-ওখানে শুয়ে থাকা গলিগুলো
বিশাল কোন এক খাতা থেকে তারপর
নাম ডেকে চলে কেউ, যেহেতু নির্বাচন আসছে;

একটা রসিমন রাস্তার পাশে কি অবলীলায়..
পাল্টে নিল তার শাড়ি,
এইখানে এসে তাই
রিকশাগুলোর গতি কমে যায়...

আব্বাস নামের কেউ একজন ভিক্ষুক
কালাম নামের কেউ একজন হেলপার
আয়েশা নামের কেউ একজন ফুলওয়ালী
অদ্ভুত কুঁকড়ে থেমে যায়
কেননা ও-প্রান্তে প্রবেশ নিষেধ
সরকারী বন্দুক হাতে কিছু নির্বোধ লোক
টহল দেয়, তাদের ভেতর কুচকুচে বীভৎস
কিছু ছায়া, ছোট আগুন জ্বালিয়ে দাঁড়িয়ে
ক্রসফায়ারের আনন্দে উত্তপ্ত...

কেউ বুঝতে চায়নি কখনও
এ শহর কেন কোনদিন কারো নয়
কারণ সবাই কারমেন নয়
সবার রাজহাঁস হয় না
আর কারও পাঁজর অন্ধকারে
জোছনা বিলোতে পারে না..

এরপর রাত বাড়ে..
ধীরে ধীরে -
নর্দমার স্রোতের সঙ্গীত স্পষ্ট হয়..
পরিত্যক্ত একটা গাড়ীর ভেতর একটা কালাম
একটা রসিমনের শরীর থেকে ভালবাসা খুলে নেয়,
বেড়ালের বাচ্চাটা কাঁপতে কাঁপতে মরে যায়..
আর একটা আয়েশা মায়ের মৃত্যুতে ডুকরে ওঠে..
অবশেষে কারমেন এবং রাজহাঁস
অন্ধকার সুতোয় গাঁথা গলিগুলোর চুল
আঁচড়াতে থাকে... ভোর হবার আগ পর্যন্ত...

শেষ রাতের যাত্রা

গলির মোড়ে পৌঁছামাত্র

রাত পৌনে চার

আঁধারের স্বচ্ছ কলজেটাকে খুবলে তুলে

লেপ্টে দেয়া হয়েছে আকাশের শরীরে

মৃত্যুর মতন নিস্তব্ধতা প্রতিটি ল্যাম্পপোস্টে...


নির্জন পথ, সঙ্গ দিচ্ছে

বিদ্যুতের তারে লেগে থাকা প্রতিটি মৃত বাদুড়

ভাঙ্গাচোরা বাসটার গা ঘেঁষে যাই

তার বুকের কষ্ট আর

একটি বেড়ালের শরীর

মিশে আছে নর্দমার ভেতর

কলার খোসা এবং সবজি বিক্রেতার দুঃখের মাঝে


কিছু দূরে

একটা বিলবোর্ডকে ঘিরে কিছু কুকুর পড়ে আছে

কর্পোরেশনের আবর্জনাবাহী গাড়িটা

মাঠের ধারে বিকল,

আবর্জনার স্তুপ তাই ডাস্টবিন ফুঁড়ে

সমস্ত শহরে গন্ধ বিলোচ্ছে..

পথের পাশে তিনটি ভাসমান পরিবার

এবং একটি ঘুমন্ত শিশু

তারপর কেবল অন্ধকার...


হঠাৎ

সেই অন্ধকারের ভেতর ভেসে ওঠে মৃত বন্ধুর মুখ...

পলক ফেলি,

"তুই তো বেঁচেই গেছিস, বন্ধু

আমার যে বড় কষ্ট..

চেয়ে দ্যাখ..

আরো একটি শিশু ঘুমিয়ে পড়েছে,

তার চোখের জল শুকিয়ে যাচ্ছে,

তার বুকের হাড়গুলো তাকিয়ে আছে আমার দিকে,

ওর পাকস্থলিতে ক্ষুধা ওঁৎ পেতে আছে

ঘুম পালালেই জাপটে ধরবে ওকে,

শিশুটি কাকে জাপটে ধরবে বল..."


আবার চলতে হয়

কুয়াশার মধ্যে নিজেকে একলা লাগে...

বন্ধুর মুখটা ধীরে ধীরে মিশে যায়

দেয়ালে লেপ্টে থাকা একটি লাল অক্ষরের ভেতর ।।

শুক্রবার, ১৩ নভেম্বর, ২০০৯

যুবক-যুবতী

।১।

যুবতীকে কেউ দ্যাখেনি,
যুবক সারাটা দুপুর রাস্তার ধারে,
তার বুকপকেটে আগলানো চিঠিখানা
উত্তেজনা আর উৎকণ্ঠার ঘামে ভিজে উঠেছে,
সস্তা কলমের কালি, জড়ানো হাতের লেখা
যুবকের বুকের কম্পন ;

অজস্র ভুল বানানের মাঝে -
ভালবাসি শব্দটাই অনায়াসে
পড়তে পারে যুবতী,
ঠোঁটখানা হালকা বাঁকায় সে,
বুকের ভেতরটায় কী যে হচ্ছে
স্বয়ং ঈশ্বরও জানেন না,
আলগোছে হাতব্যাগের ভেতর,
নানান জিনিসপত্রের সাথে
মিশে যায় চিঠিখানা ।।


।২।

রেস্তোরাঁ উপচে পড়া ভীড়,
মুখোমুখি যুবক-যুবতী...
যুবতী বলল -
পরশু আমার বিয়ে
লক্ষীটি হয়ে আসবে,
হালকা সবুজ রং-এর মাঝে
হালকা প্রিন্টের একটা শাড়ি
আমার চাই-ই চাই,
নাকী তা-ও পারবেনা...

যুবক মাথা নীচু করে
ছুরি দিয়ে কাটলেট কাটে,
কেবল কাটে, আবার কাটে,
কাটতেই থাকে...
যুবতী আবার বলে -
একী খাচ্ছ না কেন ..
যুবক একবার মাত্র তাকায়
হাসার চেষ্টা করতে করতে বলে-
কাটলেটটায় ঝাল বড় বেশি
খাওয়া যাচ্ছে না..

যুবতী পানির গ্লাস এগিয়ে দেয় ।।

কুয়াশার ভেতর

কুয়াশার ভেতর
অবশিষ্ট উষ্ণ নিঃশ্বাসে
লিখবার ইচ্ছে ছিল
নিতান্ত ছোট একটি বাক্য
নিদেনপক্ষে একটা শব্দ

বুকের পাঁজর ফুঁড়ে
উঠে এল দীর্ঘশ্বাস
পুরনো, শীতল

অসুখ, অসুখ

অনেক অনেক রোদ
ছাই হয় ঝোপ, ফণিমনসার
হঠাৎ হাওয়ায়, শরীর ভিজতে চায়
মেঘ নয়, তার কাছে বৃষ্টি নেই
উড়ে যায় হাওয়াদের প্রেত
মৃত শকুনের পালক
অসুখ, অসুখ

বৃহস্পতিবার, ৫ নভেম্বর, ২০০৯

একটা স্বপ্ন ছিল

একটা স্বপ্ন ছিল
খুব কাছ থেকে কেউ ডাকবে রূদ্র
আর আমি ডাকবো নদী

বুকের খুব ভেতরকার স্বপ্নটুকু বুকের আরও ভেতরে
অভ্যস্ত দীর্ঘশ্বাসে পাশ পিরে শোয়
কেউ কখনো রূদ্র নামে ডাকেনা
আমিও নদী নামে ডাকার মতন কাউকে খুঁজে পাই না..
দিনের পর দিন, হেঁটে হেঁটে কোথায় যেন চলে যায়;
আজ পকেট হাতড়ালে, খুচরো আর ছেঁড়া কয়েকটি নোট
স্বপ্নদের কোন পকেটে যে রেখেছি..
লোকাল বাস, মানুষের স্তুপ,
এরকাঁধ, ওর মাথা, তার চোখ - কপাল
আধুনিকার ঠোঁট, ঝগরুটের বুক
আমিতো এভাব দাঁড়াতে চাইনি..
ভাবতে ভাবতে স্টপেজ এসে যায়,
কেউ একজন উঠে গেলে বসে পড়ি,
বসে বসে ভাঙ্গাচোরা স্বপ্নদের জোড়া দিই,
আবার ভেঙ্গে যায় ওরা,
হাতে নিই, স্বপ্নদের চুলে বিলি কাটি.. আদর করি..
হঠাৎ সহযাত্রীর ধাক্কায় পড়ে যায় ওরা.. হারিয়ে যায়..
মানুষের ভীড়ে তাদের আর খুঁজে পাইনা ..

সেই তো একটা স্বপ্ন ছিল.. হারিয়ে গেলো..
বুকের মধ্যে মাথা গুঁজে কেউ একজন ডাকবে রূদ্র,
আর আমি - নদী ।

কালকেউটে সুখ অথবা দুঃখ

বুকটা যে কারণে অগ্রাণের হাওয়ার মতন কাঁদছিল
একই কারণে আজ তুমি-আমি-আমরা সবাই
পৃথক-বিচ্ছিন্ন-বিযোজিত
দুপুরের বয়স বাড়তে বাড়তে হাওয়া ওড়না পাল্টায়
বিগলিত অগ্রাণ রোদ অস্থির
এর অন্তঃস্থিত পুরনো বাষ্পীভূত কষ্টগুলো
নতুন রূমালে দাগ কাটে
কে না জানে
ঘাম আর কান্নার দাগ মেশে না কোনদিন।
হঠাৎ সশব্দে জাগে বুকরে ভেতরটা
নতুন প্রেমের গন্ধে আজও মেতে উঠতে চায়
অবশিষ্ট অনস্থমজ্জার কাঠামো
এখন নিশুতি গন্ধ বাতাসেতে
অমাবস্যা এলেও জানি চরকা কাটেনা চাঁদবুড়ি
নকল সুখের উত্তাপে ভিজে ওঠে দেহের অন্দরমহল
কালকেউটে সুখ অথবা দুঃখ...

যা কিছু সহজ

গাছের পাতারা ভীষণ সহজ, সবুজ
এলোমেলো বাতাসেরা দৌড়োয়,
সহজ তাদের হামাগুড়ি, লুটোপুটি
রোদেরা স্বচ্ছ, সরলরেখায় স্পষ্ট ছায়া কেটে উপুড় হয়ে
শীতল ঘাসে, নিবিড় ধুলোমাটিতে, সহজ ঘুম
পাখিরা দ্রুত ওড়ে, পেট পুরে খায়, ঘুমযায়, সন্ধ্যায়, ছোট্ট বাসায়
পিঁপড়েরা কাজ করে, সকালে - বিকালে, ঘুমায় না, গানও গায় না
ধারালো সাঁড়শিতে কেটে খাবার জমায়, শীতের সহজ সঞ্চয়
চড়াই, টিকটিকি, কুনোব্যাঙ.. সহজ খেলায় মাতে
বালুতে, সিলিঙে, ইটের ফাঁকে.. এই সহজ আবাসে
আর যা কিছু সহজ, তা সহজেই মিশে যায় সহজ বাতাসে,
জলে, মাটিতে, আকাশে আর সহজ পৃথিবীতে ।।

রাত

গাঢ় পাতার ফাঁকে টুপটাপ অন্ধকার
আকাশের চোখ আধবোঁজা লাল;
মেঘের কাজল উপচে উদাসীন,
আকাশমণির পাতাদের দল -
সাঁঝের আকাশে ছায়া কাটে,
শিমুলের ছায়ায় ছায়া হয়ে আছে বসে থাকবার পুকুড়পাড়,
বড় সাধের ছোট্ট জানলায় নিরিবিলি সন্ধ্যার শরীরের গন্ধ;
তারপর -
তারারা যখন মেঘ চেপে উল্লাস করে,
খোলা চাঁদের খেয়ায় ঘুমন্ত শালিককে যখন
আর দেখেও দেখে না কেউ, তখন -
আসে রাত,
চাঁদ, তারা অথবা অন্ধকারময় ।।

ভীষণ এক ঝড়ের প্রস্তুতি

হঠাৎ টের পেলাম,
এই মুহুর্তে ভীষণ এক ঝড় উঠবে
আমি বাতাসকে চিনি, সে আজ ভীষণ অস্থির
একটু একটু করে অন্ধকার নামে নগরীর পথে
বুড়ো বটগাছটার পাতার স্তুপে মাতম উঠেছে
আমি দেখতে পাচ্ছি,
ধুলোর ভেতর ছায়া জেগে উঠছে
ধীরে ধীরে সব জানলা বন্ধ হয়ে যায়
সকল দরোজায় কপাট পড়ে সশব্দে,
মেঘেদের মৌন মিছিল অধিকার করে নিচ্ছে
মানুষের আকাঙ্ক্ষিত আকাশ
নাগরিক পাখিদের তাড়াহুড়োতে কোথায় যেন সাইরেন বাজে
সশব্দে চলে যায় বার্তাবাহক গাড়ী
দিনমজুরের দল যাত্রীছাউনির নীচে জবুথবু
ছোট এক টোকাই প্লাস্টিকের থলে হাতে কোথায় যেন চলে যায়
ভিক্ষুকর থালায় উড়ে আসে মেহগনির ফল
কোন এক অন্ধগলির বাসিন্দা ডুকরে কেঁদে ওঠে
বদ্ধ জানলার ওপাশে -
মোমবাতির আলোয় দৃশ্যমান হয় সদ্যেজাতের মুখ;
আর আমি -
কেবল ঝড়ের গন্ধ শুকেঁ দেখি, ঝড় আসছে ।।

বুধবার, ৪ নভেম্বর, ২০০৯

আমি আর এক কাপ ঠান্ডা চা

টেবিলের উপরটা ধুলোর রাজত্ব
তার এক কোণায় সাদা এক কাপ
সূক্ষ্ম ধোঁয়ার আনাগোনা নেই, নিষ্প্রভ চা
এই এক কাপ ঠান্ডা চা আর আমি
এই নিয়ে সংসার
বাকীটা ধুলোর অন্ধকার,
জানলা দিয়ে আলো আসে, ধুলো আসে
আমি এক কাপ চায়ের আশ্রয়ে
বাতাসে মিলিয়ে যাই

বাইরের পৃথিবীটা গাঢ় মেঘের আওতায়
ওটা আমার নয় আর
সবুজ মাঠ, চৈত্র্যের রোদ, দক্ষিণের বাতাস
আর যা কিছু -অন্য কারো
আমার শুধু
এক কাপ ঠান্ডা চা
যা কেবলই আমার ।।

অদ্ভুত শৈশব

সারবাঁধা অনেকগুলো কৃষ্ণচূড়ার গাছ,
ডিসেম্বরে তখন বার্ষিক পরীক্ষার সময়
একশোটা রোদ্দুর যেন গাছগুলোর ডালপালা চিরে
আছড়ে লুটোপুটি খেত, কবেকার চুন সুরকিতে..
আমার প্রথম ইস্কুল..
সকাল সকাল পরীক্ষার দিন
ঠান্ডায় হাত যেন চলতে চাইত না
কী ভীষণ ভয়ংকর অংক পরীক্ষা
নতুন নতুন পেন্সিল আর রবারের গন্ধে কেমন ভরে থাকত বিশাল ঘরটা
মস্ত বড় পরীক্ষার ঘর.. পরীক্ষা পরীক্ষা গন্ধ..
পরীক্ষা শেষ হলে মজার এক বন্ধ আসত,
তখনও কৃষ্ণচূড়ার লাল লাল মুখ নিয়ে বসে থাকত আমার ইস্কুলটা
আমার প্রথম মাঠ,
ছোটবেলাকার কারো সাথে কৃষ্ণচূড়ার রেণু নিয়ে খেলা.. বন্ধুহীন শৈশবের বেলা
নিজেকে নিয়ে তখন অঢেল সময়..

সাড়ম্বরে আসত ছাব্বিশ মার্চ..
সবাই লেফট-রাইট করত, আমি কেবল হুমড়ি খেতাম
আরো বড় এক মাঠ ছিল, সবাই স্টেডিয়াম ডাকত,
সবাই কত কী করত..
আমি কেবল বোকার মত দেখতাম..

যে বাসাটায় আমরা ভাড়া থাকতাম তার সামনের পথে
শিমুলের তুলো উড়ে উড়ে আসত..
বন্ধ ঘরে বুকের ভেতরে একটা মন পালাই পালাই করত,
সেই পুরনো বাড়িটার কোণায়, শ্যাওলায় শ্যাওলায়..
আমার অদ্ভুত শৈশবটুকু ফেলে আসতে হয়েছে ।।

আরো একটি ঝড়ের কবিতা

বহুদিন পর কোন ঝড়ের কবিতা লিখছি,
কাল বিকেলে শরীরটাকে ডুবিয়েছিলাম ঝড়ের সমুদ্রে,
চার হাত-পা, বুক-পিঠ সব ছিল ভূমির সমান্তরালে..
ঘামে সপসপে হয়ে যাওয়া আদিম বুকটা
কঙ্ক্রিটের বেঞ্চিতে নকশা কেটে লেপ্টে,
বাতাসের ঘূর্ণিতে জগতের ধুলো
আমার মাথার চুলে জট পাকিয়ে যায়..
আর পিঠের উপর জড় বজ্রাসনে ধ্যানে,
তারপর..

যাবার আগে কিছু একটা বলেছিল সে..
বিদ্যুতের চমকের মত হয়তো তা ঝলসেও উঠেছিল,
অথচ আমি তন্দ্রাচ্ছন্ন.. বাতাসের হাহাকারে
বজ্রের হুংকারে তন্দ্রা ভাঙলো ঠিকই
তবে ঝড়কে পেলাম না খুঁজে আর..
ঝর ঝর বৃষ্টি নামল ছাদের সাদা বুকে..

তখনও বৃষ্টি থামেনি,
ভাবছিলাম ভিজি..
সে কী মুষলধারের ধার..
ভয় হল.. ভাসিয়ে নেয় যদি..
আমি তো সাঁতার জানি না....

এক অদ্ভুত সকাল

কিছু কিছু সকাল আসে
গায়ে জড়িয়ে হলুদ নরোম রোদ
যা কিনা নরোম হাঁসছানার চাইতেও
গতরাতে - আমায় না করে দিয়েছ তুমি
অথচ দেখো সকালটা কত অদ্ভুত
আমগাছটার গায়ে কেমন লেপ্টে আছে রোদগুলো ।।

উল্টো আকাশ

কাল
একলা সকাল
ভীষণ ফর্সা মেঘ
স্বচ্ছ হলুদ রোদ
মিষ্টি কোন গান
খুব আপন বাতাস
অচেনা গাঢ় নীল ফুল
পুরনো ভালবাসা
টুকটুকে সূর্য
অবশেষে উল্টো আকাশ

কতটা একলা হলে কেউ

কতটা একলা হলে কেউ
কেবল নিজের নিঃশ্বাসের শব্দ শোনে
তার সাথে মিশে থাকে বাতাসের কিছু কথা
মাঝরাতের বিষণ্ন এক টুকরো অন্ধকার
স্যাঁতস্যাতে ঘুমোবার ঘরে পুরনো এক ফ্যানের কান্না
- আর কেবল নিঃসঙ্গতা
শেষ রাতে এক ছলক আলোয় ভেঙ্গে যাওয়া রাতের গভীরতা

কতটা একলা হলে কেউ
দিনের আলোর থেকে পথ খোঁজে পালাবার
আর জীবন থেকে
হারিয়ে যাওয়া প্রেম থেকে
বুকের একটি জায়গায় কেউ থাকেনা, সেখানে

শরীরের কোথাও এক টুকরো পুরুষমানুষ থাকে
কতটা একলা হলে কেউ
কেবল নিজেকে আদর করে ফেরে
কারো চোখে চোখ রাখতে ভয় পায়
ভুলে যায় ।।

গাঢ় এক দুঃখ

অনেক দীর্ঘশ্বাসের শেষে গাঢ় এক দুঃখ এসেছে
সন্ধ্যে নামার সাথে সাথে এই দুঃখটা জাপটে থাকে সারাটা শরীর,
দুচোখের মাঝামাঝি কোথাও কান্নারা বসে আছে অপেক্ষায়,

এভাবেই সন্ধ্যারা সকালের পাশে
তিল তিল গড়ে তোলে গাঢ় অন্ধকার
শব্দের গা বেয়ে নৈঃশব্দের কষ
তার ঠিক বাঁ পাশে
একটা অতৃপ্ত মাংসের টুকরো
রোদের মৃতদেহ নিয়ে
বল্গাহীন দুঃস্বপ্ন বুকে...

পার্শ্বচরিত্র

অদ্ভুত এক নাটক হচ্ছে জীবন
বড়ো বড়ো নায়ক আর নায়িকাদের ভীড়ে
কোনরকম পার্শ্বচরিত্র আমি এক
ঝড়-জল-রোদ বাচিয়ে বেঁচে থাকি,
সকাল সকাল কিছু একটা অজুহাতে ঘুম শেষ হয়
তারপর নানা একঘেয়ে কাহিনীতে দিন বুড়ো হয়
রাতে ঘুম লাগার আগ পর্যন্ত
মন খারাপ করা অন্ধকারে গা-ডুবিয়ে বসে থাকি ...

কিছু কিছু সুখস্মৃতি আছে
তাই মাঝে মাঝে উল্টে-পাল্টে দেখি,
স্যাঁতাপড়া আনমনা ছন্নছাড়া কষ্টে
ভিজে থাকে ভেতরে কোথাও
একা অপেক্ষায় থাকি, কোন এক বাতাসের
দীর্ঘশ্বাস উঠে আসে, চাপা দিই..

মাঝে মাঝে হাঁটার সময় আকাশ দেখি
ভাগ্যিস কারো চোখে পড়ি না
গলির কুকুরগুলোর সাথে দৌড়াই
যদিও মাঝে মাঝে কষ্ট লাগে,
পরে সব ঠিক হয়ে যায়, কম কথা তো নয়..
ঝড়-জল-রোদ বাচিয়ে বাঁচা হাজারো পাশ্বচরিত্রের অন্যতম ।।

থেমে আছে রোদ্দুর

বারান্দায়
থেমে আছে রোদ্দুর
তোমার ঠিকানা আর কদ্দুর

পিছলে যাচ্ছে সময়
বুকের মাঝে
ঢুকে যাচ্ছে ভয়

একা বসে আছ কোথাও
মুঠো ফোনে একটু জানাও
ভালবাসি তোমায় ভেবেই
ঘর খুজিঁ তোমার চোখেই

ভালবাসার রঙটা রোদে
মিশে আছে উল্টো চাঁদে
ভালবাসার রঙটা রোদে
মিশে আছে উল্টো চাঁদে


বারান্দায়
আজো আছে রোদ্দুর
জীবন মোহনা আর কদ্দুর

বদলে গেছে বিকেল
বেড়ে গেছে আজ যুদ্ধ-জেল

একা তুমি নেইতো আর কোথাও
তবু তুমি এখনও ভাবাও
ভালবাসা বলতে কিছু নেই
বেঁচে থাকা যেমন ছিল সেই

মাঝখানে পুড়ে গেলো মন
ঘুমহীন রাত্রি যায় এখন
মাঝখানে পুড়ে গেলো মন
ঘুমহীন রাত্রি যায় এখন

ঘুমে হারিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত

আমার রাতে ঘুমোবার আগে কষ্ট হয়
শুয়ে শুয়ে কষ্ট হয়
বুকের কোথাও ফোঁটায় ফোঁটায় কষ্ট জমে
রাত্রি যত গাঢ় হয়
কষ্ট বাড়ে
ঘুমে অচেতন হবার আগ পর্যন্ত

উল্টোপাল্টা স্বপ্ন হয় ঘুমের ভেতর

কোন না কোন ভাবে দিন যায়
তারপর ঘড়ির কাটায় টিক টিক রাত বাড়ে
রাতে ঘুমানোর আগে আবার কষ্ট হয়
উপুড় হতে কষ্ট হয়
ধীরে ধীরে বুকে জমে কষ্ট
এরপর রাত যত গাঢ় হয় ....
.......
....ঘুমে হারিয়ে যাওয়ার আগ পর্যন্ত ....

দুঃখটুকরো

।১।

কেউ জানেনা দুঃখগুলো কবে
উঠোন ছেড়ে দৌড়িয়ে পালাবে

।২।

দুঃখগুলোর বসত কোথায়
দুঃখ ছেড়ে কেউ কি পালায়
এ ভবে যে সুখের কাঙাল
সে-ও পালায় দুখের কাছেই সুখকে ছেড়ে

।৩।
দুঃখটাকে আগলে রেখে বুকে
অশ্রুফোঁটা হাসির আলোয় ঢেকে
উঠেই দেখো খিলখিলিয়ে
দুঃখ আপন সবচে' আপন
দুখই জীবন

।৪।

দুঃখ নাকি আমার মানিকজোড়া
কেউ বলেনি বলছে মন-ই
মনটা বোধহয় ঘর ফিরেছে
অনেক অনেক রাতের পরে

।৫।

বহুদিন পর
চোখের শরীর বেয়ে
টপ টপ লবণপানি
দুঃখ বুঝি উছলে উছলে পড়ে

।৬।

কষ্ট লাগে..
অশ্রু লাগে..
দুঃখ লাগে..
এক জীবনে..
সবই লাগে..

জীবন-কবিতা

জীবন আর কবিতা নয় এক
তবুও জীবন কবিতায় এলোমেলো
নাকি জীবনই কবিতাকে এলোমেলো করে দেয় ...

কবিতা ছাড়া কেউ কেউ বাঁচে না..
আবার এই কবিতার জন্যই কেউ কেউ পারেনা জীবনকে পুরতে
হাতের মুঠোয়..
পারেনা চলতে.. আর দশটা মানুষের মতন
কবিতাই তাদেরকে আলাদা করে দেয়..
একা করে দেয়...

প্রেম

রিনির শরীরটা জিব দিয়ে ছুঁয়েছিলাম
বয়স তখন আমার সাত
অত ছোট বয়সটাতে চুমো দেয়া হয়নি বোধহয়;
শিমুলদিদি দেখতে ভাল ছিল, প্রেম প্রেম ভাব হত
আজও মনে আছে, দিদির টমেটোর মতন গালটা;
বাসার সামনে দিয়ে বিকেলবলো, একলা মিথিলা.. মিথি
চেহারা মনে নেই.. চশমা পরত চায়না ফ্রেমের
না দেখেই প্রেম হয়েছিল, প্রেম সংক্রান্ত আবহাওয়ায়;
নীচতলায় কারা যেন ভাড়া এসেছিল, মিষ্টি এক মেয়ে ছিল ওদের
কী যে ভাললাগতো, রূপ কি প্রথম বুঝতে শিখলাম
একটা মেয়ে এত সুন্দর হতে পারে,
প্রেম হত কিনা জানিনা, কষ্ট হত খুব
ছোটবেলাকার ছোট্ট বুকে, প্রথম কামনা প্রিয়াংকা
মাঝে আরও কেউ এসেছিল, কেউ কেউ আমার জন্য
টিফিনের খাবারটা রেখে দিত;
বপি নামের মেয়েটা, এ আবার কেমন নাম প্রশ্ন ঘুরত মাথায়
ঝুটিবাঁধা চুল আর সাদা সাদা দাঁত, ভালো লেগেছিল
মোহ ছিল, প্রেমও হয়েছিল নিশ্চয়ই;
তারপর জীবনের সাতটা বছর ধরে রীতাকুন্ড..
মুখ ফুটে বলা ওই প্রথম.. হল না;
এরপর প্রিয়তি ছিল, বেস্ট ফেন্ড, প্রেমিকা হতে চাইল না..
যা হোক.. ধানসিঁড়ি এল, এইবার প্রেম হল, দুপক্ষ থেকেই
যদিও আঠারো মাসের বেশি টিকল না, হারিয়ে গেল সে..
আপাতত একাই আছি, আর..
যাকে দেখছি তাকেই ভাল লাগছে, প্রেমও হচ্ছে....

সোমবার, ২ নভেম্বর, ২০০৯

রাত্রিচারণ

আমার এই রাতটি বড়ো আপন
যে রাতে তুমি আমায় ছেড়ে গিয়েছিলে
অনেক অনেক আগে
এসে দেখো, আমি সেই নারকেল গাছটার নীচে শুয়ে -
বুকের বোতাম দুটো সেই যে খুলে দিয়ে গেলে
আর লাগাতে পারিনি...
আবার এসেছে হেমন্ত,
আমায় সান্ত্বনা দিতে
প্রকান্ড চাঁদ তার যাবতীয় জোছনা নিয়ে -
আছড়ে পড়ছে খোলা বুকে
দেখলেনা, বুকের শিশিরে চাঁদ জ্বলে কত অদ্ভুত...

ভগ্ন প্রেমিকের বুকের আগুন নাকি কেবল জ্বলতে থাকে
জ্বলতেই থাকে

তোমায় একটা নাম দিয়েছিলাম, মনে আছেতো
নাকি ভুলেই গেছো -
কত রাত, কত জোছনা, কত কত শিশির ভেজানো কবিতা..
কিছুই কি মনে নেই...
অন্যের বুকে কতটাই বা উষ্ণতা
আমি সংক্রান্ত যা কিছু ছিল...
সব কি ঘামের সাথে বেরিয়ে গেছে ..
আমি কাঁদিনি কোনদিন,
সময় পেলে কেবল জোছনায় ভিজি,
খোলা বুকে মশারা চুমুক দেয়..
আমি তো বোতাম লাগাতে পারিনা আর..
সেই যে খুলে গেছ..

পরিত্যক্ত মানুষের নাকি আর ঘর হয়না
কোনদিন না ।।

রবিবার, ১ নভেম্বর, ২০০৯

একটা ভোর

আকাশে তাকাই, ভোর হয়
যেন আনমনা শিশু এক ছড়িয়েছে রং, ছোপ ছোপ মেঘ..
কিছু হাঁস পুকুরের জলে, দুলে দুলে যায় আকাশের গায়ে ভাঁজ ফেলে...
শহরের শরীর আশ্চর্য শীতল.. রোদ আসছেনা...

কাল রাতে ঘুম হলোনা, দেখতে চাইলাম মানুষ কী করে ঘুমোয় ..
কী করে বৈদ্যুতিক পাখার গুঞ্জনের সাথে মানুষের নিঃশ্বাসের শব্দ মিশে যায়..
মেলাতে পারিনা..

রোদের প্রথম ঝলকে দেখি এক পাতাকুড়োনি মেয়ে.. তাকিয়ে আছে নিস্পলক..
লালচে দালানের সারি সারি জানলার শার্শিতে রোদের আনাগোনা বাড়ে...
আকাশে মেঘের কারুকাজ শুরু হয়..
এখন এটিকে অনায়াসে কোন একজন ঈশ্বরের কাজ বলে ধরে নেয়া যায়...

কেন জানি বিতৃষ্ণা বোধ জাগে...
অদ্ভুত এক শূন্যতা ভেতরে কোথাও,
রাতজাগানিয়া সুখ নেই মোটেই..
রোদ বাড়তে বাড়তে চলে যাই... শব্দহীন...
হঠাৎ এক ঝাপটা নোনাজল...
ঝাপসা করে দিল চলার পথ ।

ক্লান্ত এবং ক্ষুধার্ত হবার গল্প

রাত্রিবেলার মানুষগুলো
পথের মাঝে সুখ খুঁজে পায়
আমি হাঁটি কেবল উদ্দেশ্য-গন্তব্যহীন
যেদিকে পথ পাই যাই
সুখ নয়.. ক্লান্তি কুড়াবো
পথে যদি পাই

পলাশী, ফুলার রোড
বিবেকানন্দের সামনে দিয়ে
ছোট পুকুরটার ধার ঘেঁষে
জগন্নাথের গেইট.. তারপর
শামসুন্নাহার হল, লোকারণ্য টিএসসি..
পাবলিক লাইব্রেরির জানলাগুলো...
মধুর ক্যান্টিন.. একটু দাঁড়াই..
নজরুল সৌধের শীতল পাঁচিল ছুঁই..

এরপর আজিজ মার্কেট দুই হাত তুলে ডাকে..
থামি না... কাঁটাবন এসে যায়...
এক সাদা বিলাতী কুকুর তেড়ে এল,
আমি হেসে ফেললাম..
তারপর সোনালী মাছগুলো সাঁতার কাটলো..
হঠাৎ নীলক্ষেতের মানুষগুলো আমায় টেনে নিল চুম্বকের মতো..
তারপর ঠেলতে ঠেলতে ওভারব্রীজ পার করে..
নিউমার্কেটের দুই নম্বর গেটে উগরে দিল,
দেখি দু'টো মেয়েমানুষ হাসছে,
এদের একজনকে আমি চিনি , "ভাল আছেন?"
চিনেও চিনল না ..যাক
আমি না থেমে তিন নম্বর গেট পেরিয়ে নিঃশ্বাসের উত্তাপ টের পাই..
তারপর চন্দ্রিমা, সুবাস্তু, ইস্টার্ণ মল্লিকা.. অনেকটা পথ..
এবার ঘুরে হাঁটা দিই উল্টো পথে..
চাদনী চকের মুখে আমার ছুঁয়ে দিল এক নগরবালিকা..
অবধারিত ভাবে.. আমি ওকে ভালবেসে ফেলি,

একী - ঘামছি কেন আমি,
সারাটা দিন কিচ্ছু খাইনি, পানিও না
দেখতে চেয়েছি, কতটা ক্লান্ত - ক্ষুধার্ত হলে..
কবিতার ভুত দৌড়ে পালায়..
বুকের মধ্যে ধ্বক করে ওঠে ক্ষিধে..সারা শরীর দুলে ওঠে..
ইডেন কলেজের মেয়েগুলোকে দেখেও দেখি না..
মাথার চিন্তাগুলো কেবল ঐখানটায় এসে জট পাকিয়ে যাচ্ছে,
একটু শুতে হবে.. একটু কিছু খেতে হবে... একটু জল...
ঘোলাটে লাগছে আজিমপুর বাসস্ট্যান্ড.. পলাশীর আবদ্ধ বাজার..
পা চলতে চায়না... খুব কষ্ট হয়... চাবি ঘুরাতে...
তালার মুখ হাঁ করাতে...
দেখি ব্যস্ত বিছানা তড়িঘড়ি করে উঠল..
আমায় কোলে করে শোওয়াল..
পিঠ ঠেকিয়ে আমি অবাক -
নিজের অজান্তে কবিতা চলছে ... প্রলাপ বকছি...
কতটা ক্লান্ত হলে... কবিতা উড়ে যেতে চায়... পারে না...

ভীষণ খিদে.. ইচ্ছে হয় গোটা ডাইনিং হল গিলে খাই...
দেখি সাকিব সেঞ্চুরী করছে...
স্বচ্ছ ঝোলে মুরগী ভাসছে...

স্বর্ণা বলেছিল ..

স্বর্ণা বলেছিল .. এসোনা আর কোনদিন
আরও বলেছিল .. ভাল হয়ে থেকো
আমি কথা রাখতে পারিনি...
হাতে পয়সা জমলে আজও স্বর্ণাকে খুঁজি..
স্বর্ণা ছিল না আর কোথাও...
স্বর্ণা নেই...

স্বর্ণা.. আমি খুব নীরবে বাঁচব
দেয়ালের সাথে মিশে থাকব..
একদম টের পাবে না...
তবু তুমি আসবে না ?

ঘাসবন্ধু

আমার ঘাসবন্ধুটা বলল, আজ পূর্ণিমা
চায়ের সাথে জোছনা গলিয়ে খাই চল..
আমি কিছু বলতে পারিনি,
অদ্ভুত গোল চাঁদ জোছনা বিলোয় আর হাসে
চায়ের সাথে সে জোছনা গললনা কিছুতেই...
মেঘ থমথম করছে বুকের আকাশে
ভয় হয়.. রাত গাঢ় হলে ঝড় না ওঠে...

আমার ঘাসবন্ধু রাত জেগে অংক করবে..
আমি অবাক হয়ে ওর চোখ দুটো দেখার চেষ্টা করব...
যে বন্ধু.. আনমনে মিশে গেছে বাহুর ভাঁজে ।

প্রেম

একটা ছেলে বুক খুলে পড়ে আছে
একটা মেয়ে ঝুঁকে ঝুঁকে ভালবাসা নিচ্ছে
সিলিং অন্ধ..
মাঝে মাঝে দেয়ালগুলো আড়চোখে তাকায়..
আর মেঝে .. কেঁদে কেটে হতবাক...

বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০০৯

গীটার

প্রতিটি দিন ঘরের কোণায় একটি গীটার..
জমছে ধুলো সাকুল্যে তার চারটি তারে..
একটি ছেলে হঠাৎ করে আদর করে..
কষ্টগুলো যখন তাকে জাপটে ধরে ..

হেমন্ত শেষ বিকেল এলে যখন ছেলে..
চুপটি করে খুব নীরবে নষ্ট হল..
বুড়ো গীটার কেউ জানে না কিসের ছলে..
এক জীবনের জন্যে সেই যে ঘর পালাল ......

মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০০৯

একটি মেয়ে - ০১

একটি মেয়ে আছে বাতাসের মতন
আমি এই মেয়েটিকে ভালবাসি
তার বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ
হেমন্তের মেঘের মতন
যেখানে নেইল পলিশ নিষিদ্ধ
আমি চাই ...
আমি এই মেয়েটিকে চাই।

অদভুত অদভুত

মানুষ হাঁটছে খুব
ঝড়ের আঁধারে ডুব
অদভুত অদভুত

লালচে ঝড়ের নখ
আকাশে টাঙানো হোক
অদভুত অদভুত

পাতারা মেহগনির
জ্বলে থাকে অগভীর
অদভুত অদভুত

চাকায় ওড়না পেঁচায়
রিকশাঅলা বিড়ি খায়
অদভুত অদভুত

দুঃখপাখি

বুকের মধ্যে দুঃখ থাকে
চুপটি করে দুঃখ থাকে
দুঃখপাখির নাম জানিনা
- কেউ জানেনা..
কোথায় জন্ম তাও জানিনা
জানা ছিল হয়তো আগে
এখন তো নেই
নেই জানা নেই।
তবুও এমন দুঃখপাখি
বসত করে বুকের ভেতর,
উড়ে আসে কল্পনাতে
হাসি - গানে জড়িয়ে থাকে
নিবিড় হয়ে
উথলে ওঠে, কবিতাতে।।

তোমায় ঘিরে কবিতারা

ছেড়ে গেছ সেই কবে... তারিখ ভুলে গেছি,
কবিতার কলম দিয়ে গেছ হাতে,
আজ জানি... ভালবাসতাম না তোমায়,
কিছু কবিতা কিন্তু তোমায় ঘিরে আজো সাঁতরায় -
আমার সেই সন্তানদের আমি ভালবাসি,
ভালবাসাগুলো বাড়ছে.. যত দিন যাচ্ছে,

এখন আর কান্না হয়না..
তবে উদ্দাম আবেগে থরথরিয়ে কাঁপি আজও,
আমি যে কবিতা ভালবাসি...

কিন্তু.. কবিতা শেষ হয়ে গেলে...
বুকের ভেতর কী অর্থহীন কষ্ট!

একটা একা পাখি এবং বর্ষা

কোন এক হিমকুয়াশার দেশ থেকে
এসেছিল পাখি এক, একা

সবুজ বনের দেশে সে বর্ষায় ভিজে গেল
কেউ টের পেলনা...
বর্ষার সাথে তার প্রেম হয়ে গেল..
বর্ষার আশায় পাখি ছিল অপেক্ষায়,
বর্ষা কিন্তু আর আসেনি..
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে মরে গেল পাখি,

যেদিন পাখির শেষ পালকটা মিশে গেল বনতলে..
সেইদিন -
আকাশ ভেঙ্গে আবার বর্ষা এল, কেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল,
আরো এক একা পাখি এসেছে,
অন্য কোন দেশ থেকে...

মুগ্ধ হচ্ছি

কোন জিজ্ঞাসা নেই
কেবল মুগ্ধ হচ্ছি
স্বর্গ আর পৃথিবীর ব্যবধান নেমে গেছে এক পর্দায়
মুগ্ধ হচ্ছি
এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে
ছোট ছোট সুখ হচ্ছে
মুগ্ধ হচ্ছি
স্বর্গ ছেড়ে দিচ্ছি
কড়া এক কাপ চা হবে আসন্ন সন্ধ্যায়
আশ্বস্ত হচ্ছি
মুগ্ধ হচ্ছি

দুঃখ করোনা...

দুঃখ করোনা প্রিয়তমা
ভালবাসা ছোট্ট বলেই মিষ্টি
দুঃখ করোনা প্রিয়তমা

আবার কেউ ভালবাসবে
সেই ছোট্ট মিষ্টি ভালবাসা
দুঃখ করোনা...
প্রিয়তমা

কবিতা লিখতে হবে...
আবার কবি হব...
দুঃখ করোনা প্রিয়তমা
কবিরা চিরকাল ভালবাসেনা।।

ঈশ্বর

অভিযোগ নেই, শুধু খোঁজ চাই ,
ছোট ছোট সুখ দিয়েছ বলে ধন্যবাদ, নিয়ে যাও
পরিতৃপ্ত আমি, ভয় নেই
চুপ করে ঘুরে যাও।।

সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০০৯

নারী হয়ে জন্মালেই বোধহয় বেশি ভাল হত...

গতরাতে আমার খুব প্রিয় এক বন্ধুর মাথা
আমার কোলে রেখে তাতে হাত বুলোতে বুলোতে
মনে হল, নারী হয়ে জন্মালে বোধহয়
খুব একটা খারাপ হতো না,
কে জানে.. হয়তোবা জিতেই যেতাম.. জীবনের বাজি।

আমার সমবয়সী মেয়েদের চোখের দিকে তাকালে
টের পাই, ওরা আমার চামড়া.. চোখ ভেদ করে
অনেক ভেতরে.. মনটাকে নাড়ছে,
কেমন যেন গুটিয়ে যাই নিজের মধ্যে,
প্রকৃতি হয়তোবা নারীকেই উর্ধ্বতন করে সৃষ্টি করেছিল..

একজন নারী, একটা পুরুষের চাইতে অনেক গভীর..
নারী ভালবাসতে জানে, নিঃস্বার্থে ভালবাসতে পারে,
আবার সে এও জানে..
ভালবাসার সত্যি প্রতিদান সে পাবে না..

অবাক লাগে, যখন দেখি পুরুষ ধরে নেয়
নারী তার শরীরে যাবতীয় রস জমিয়ে রাখে..
যাতে তার পুরুষকে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাখা যায়,

এজন্যই হয়তোবা.. কাউকে বলতে শুনিনি
ধন্য এ পুরুষ জীবন..

নারী হয়ে জন্মালেই বোধহয়
বেশি ভাল হত..
জিতে যেতাম .. জীবনের বাজি।।

মনুষ্যত্ব নাকি পৌরুষ

একখন্ড মাংসের আগ্রাসন -
তাতেই আমি আর মানুষ নই.. পুরুষ..

আমার সমবয়সী যে নারীটি অনায়াসে..
মানবী এবং কেবল নারীর মাঝামাঝি..
একটা অবস্থান করে নিতে পারে -
সেখানে আমার একমাত্র অন্তরায়
সেই একখন্ড মাংসের আগ্রাসন..

আমি যতটা না মানুষ -
তার থেকে অ-নেক বেশি পুরুষ।

ভোগবাদী চেতনা,
নাক, কান, চোখ এবং ত্বক ফুঁড়ে..
হুড়মুড় করে ঢোকে..
কাকে ধরে রাখবো -
মনুষ্যত্ব নাকি পৌরুষ!!

কবিতা কী করে লিখবো আমি...

আমার প্রবল উচ্চারণের স্বপ্নটা ফিকে হযে যাচ্ছে ক্রমশঃ
বুকের যেখানটায় সাহস আছে বলে ভাবতাম..
আজ সেখানে কিছু নেই..
কোনদিন ছিল কিনা.. বলতে পারিনা,

সত্যিই কি একদিন সাহস ছিল -
বুকের মধ্যে সাহস নিয়ে কখনো লিখেছি কি ..
আজো একটা শব্দ লিখতে শিখিনি..
কবিতা কী করে লিখবো আমি...

জানিনা আর কোন স্বপ্ন ছিল কিনা -
আমি তো কেবল একটি কবিতা লিখতে চেয়েছি,
যে কবিতায় থাকবে সত্য, থাকবে বারুদ,
থাকবে ভালবাসা, পাগলামি..
আর থাকবে সহজ অথচ প্রবল উচ্চারণ।

অথচ.. কবিতা কী লিখব..
একটা শব্দও লিখতে শিখিনি..

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০০৯

আকাশের টুকরোগুলো...

হয়তো মেঘের ওপাশে রোদ জ্বলজ্বল..
তাই মেঘ জ্বলে আছে আকাশে,
কিছু কিছু পাখি দূরের কোন গাছে ডাকাডাকি করে
গম্ভীর আম আর নারকেল পাতারা -
আকাশটাকে টুকরো টুকরো করে কাটে..
আকাশের টুকরোগুলো জানলা দিয়ে ঢোকে,

মাথার পেছনে চুল বেড়ে ওঠে..
ওপরে পাখা ঘুরছে সেই কবে থেকে..
ডানে বাঁয়ে জীবনের নানা অনুষঙ্গ..
জায়গা নেই..
আকাশের টুকরোগুলো তাই ঢুকে যায় মাথায়..
লাগামহীন ভাবনাদের সাথে ওরা দৌড়োয়..
ভীষণবেগে.. এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে..

সবাই কি গন্তব্যে পৌঁছায় ...

সবাই কি গন্তব্যে পৌঁছায়.. পৌঁছুতে পারে..

ভুল ভুল সব স্বপ্ন থেকে কবিতা এসেছে..
আর চরম শূন্যতার বুক চিরে প্রেম,

আজ নিতান্ত নিঃসঙ্গ এক পাথর সেজে..
শরীরের ভাঁজে ধুলো জমতে দেখি..

আমায় একা করে দিল গাঙচিল..
সময়ের গাঙচিল।।

ক্ষ্যাপারুন...

শব্দহীনতা পাশে জেগে ছিল সারারাত ..
আর ছিলনা কেউ..

ক্ষ্যাপারুন জানিস..
মাঝে মাঝে আমার ঘাসগুলো পাখি হয়ে উড়ে যায়..
ঐ ওখানে -
যেখানে দুর্বল বাতাস ছুটে চলে পরিত্যক্ত সময়ের ভাঁজে।

যেখানে আলগোছে চুমু খাওয়া পাপ,
অপরিণত অজগরের মত বন্ধ্যা সন্তান প্রসব।

আশ্চর্য !
ওখানেই আমি প্রেমিক,
বীরপুঙ্গব সেজে উল্লাস করি -
প্রিয়ার সমগ্র সম্ভ্রম হরণের কষ্টে।

ক্ষ্যাপারুন..
আজ তোর রক্তে দোষ..

সত্যি করে বল..
আজও কি তুই বাতাসের গন্ধ শুকে বেড়াস..
আমার বুকে..

ছন্দার কাছে চিঠি - ০১

এমন সন্ধ্যা জীবনে আরও কয়েকবার এসেছে,
দুঃখের স্মৃতিগুলো মনে করতে চাচ্ছি না..
তবে এই মুহূর্তে তোমার সাথে কথা বলা প্রয়োজন,
তেমন সিরিয়াস আলাপচারিতা নয়..
যেমন ধরো, কেমন আছ.. কি করছ.. এই তো..
কিন্তু তুমি তো বলবে না..
না না .. অপরাধ আমারই,
তোমায় কোন দোষ দেব না.. কখনই না..
কিন্তু জান.. যা কিছু করেছি..
তাতে আমি অনুতপ্ত নই মোটেই..
আমার যতটুকু করা সম্ভব.. তাই করেছি,
এর থেকে ভাল কিছু করতে পারতাম না..
কিন্তু মনটাকে আজও সামলাতে পারিনি,
স্বীকার করছি.. আমি স্বার্থপর.. নতমস্তকে..
সবসময় নিজেরটাই বুঝি.. কিন্তু..
মানুষের ভেতরটা কি কখনও পরিবর্তন করা সম্ভব..
নাকি করা উচিত.. আমি তো এমনই...
মনটাকে সামলাতে পারিনা..
তোমাকে বুকে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছে.. পারিনা..
তোমার কোন দোষ নেই..
তুমি এখন যা করছ তাতে ভুল ধরার কোন উপায় নেই..
যা ভাল ভাবছ তাই করছ..
কিন্তু মন তো মানছে না..
কি আর করবো বল..
ভালবাসি বলতে আজ বড় কষ্ট হয়..
অপরাধী লাগে...

মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০০৯

আমাদের বেলা হয় কি ...

যদি আকাশে তাকাও... মেঘগুলো বলে দেবে...
কতকাল সেই স্বচ্ছ রোদ নেই...
ক্লান্তি ছুঁয়ে যায় তার ছোট্ট কপাল...

যদি ভাবো... নদী একাই ঢেউ গুনেছে...
ওকে জিজ্ঞেস করো...
ওর বুকেও কান্নার দাগ লেগে...

এক টুকরো সুখে...
কেমন অদ্ভুত এই পৃথিবী...

অন্য কোথাও...
আমাদের চেনা পৃথিবী থেকে... অনেক দূরে...

কিছুক্ষণ পর

কিছুক্ষণ পর...
যখন রং ধরবে পূবের আকাশে...
তখন...
একলা পাখি এক...
তার সর্বশেষ আশ্রয় আঁকড়ে রাখবার ব্যর্থ চেষ্টায় রত থাকবে...

কে জানে...
এটাই হয়তো কাজ সর্বশেষ...
যা করার ছিল বাকী...

আকুতি : এক

সমস্ত বৈশাখের রোদ...
কেবল শূন্যতায়...
ভবঘুরে কাকেদের সাথে...
এভবে আর কবে খেলেছিল...

জানিনা আবার কবে আমার এই অসার আঙুলগুলো...
জাগবে শীতনিদ্রা হতে...

জানিনা...আবার বৃষ্টি এলে কোনোদিন..
ভিজে চুল নিয়ে দাঁড়াব তোমার দরজায়...
হয়তো বলে ফেলবো ভুলে...আমায় মনে রেখেছো তো...
আমি যে আজো ভুলিনি...

কেন আমাকেই বইতে হয় যাবতীয় ক্লান্তি...
কেন আমিই হবো সর্বশেষ...
খাপছাড়া... দমবন্ধ...
ভ্যাপসা পৃথিবীতে...

আমিই বোধহয় ভালবাসতে জানিনা

এখন অনেক রোদ...
আমার অজস্র ঘামের মিছিল...
আনমনে খুজেঁছে... ঢেকেছ আঁচলে তোমার... বোশেখের রোদ...

জানিনা কখন চেয়েছি রোদ...
হয়তোবা ধুলো... গাঢ় পৃথিবীর ক্ষতকে ঘিরে...
মেঘেদের ছায়া বুকে ... বন্ধ করি দু'চোখ...
দেখি না তোমায়...

আজ তুমি কোথায আছ ...
কথা ছিল... বুকের খুব গভীরে কোথাও ... থাকবে ...
কথা রাখনি ...

আমিই বোধহয় ভালবাসতে জানিনা...
ভালবাসতে পারিনা...

যেন আকাশের বুক তুলোর নরমে আবছা

আমরা দুজন থাকি সমান্তরাল
সে যখন নীল...অনায়াসে উড়ে যাই দু'চোখের পাঁপড়ি যেদিকে...
নিঃশ্বাসের আনন্দে আঁকা অস্পষ্ট ছবি এক...
বাঁচার উচ্ছাসে গেয়ে ওঠা প্রাগৈতিহাসিক গান কোন...

ভীষণ আদরে হয়ে গেলে সাদা...
কপালের ঘামে আলতো ভালবাসায় তারে দিই পবন চুম্বন...
পাশাপাশি সমান্তরালে থাকা অনন্তযুগের সুহৃদ...

কেঁদে ফেলে যদি সে কখনো...
আমার প্রাচীন হাতের তালুতে তার অশ্রুর ফোঁটাগুলো ধ'রে...
না হয় পার্থিব এই গায়ে মেখে...
বসে রব কোনদিন সে রোদেলা হবে তার অপেক্ষায়...

জীবন আমাকে

জীবন আমাকে কবে আলগোছে দিয়ে গেছে ফাঁকি
নিকষ আঁধারে আজ পথ আলো করে সে জোনাকী

রোদ হারা শুয়ে আছি জেনেছে কী কোনোদিন কেউ
কার আশে গুণে চলি সীমাহীন কবিতার ঢেউ

বৃষ্টি এসেছিল

বৃষ্টি এসেছিল
ভিজিয়ে দিয়েছে বুকের খুব ভেতরে কোথাও...

কী করে বলি কোথায়
চোখ কেবল বাইরে ঘুরে ঘুরে মরে

ভাবতে ভাবতে ডাক এসে যায়
আমার ভীষণ প্রিয় কাঁঠালীচাঁপার বুকের ক্ষত বড় হয়
আমার চোখে জল ছিল না
তবুও দেথি ভিজে গেছে পাঁপড়িগুলো

আমিই পারিনি

আমিই পারিনি
ও কী করে পারবে বলো ...
সবার কি আর সবকিছু সয় ...

সামান্য ন্যাপকিন... মৃত
তোমার মাংসল গালের অত্যাচারে...

টিশার্টের গ্রাফিক্স পাহাড় পেরুচ্ছে...

জান কী...
কালকের সুখ চুরি যায়...
এই সন্ধ্যায়...

তোমার কাঁধের ব্যাকরণ...
চুলের আয়োজন...
বায়বীয় রমণ...
নি খরচায়...
নি স্পর্শে...

ম্যানিকুইন সুন্দরী

মাঝে মাঝে ম্যানিকুইন
ভুল হয় সুন্দরী ভেবে...
তবে তুমি সুন্দরীই ছিলে...

তুমি ছিলে শ্যামলা, যুবতী, সুলক্ষণা...
তোমার ঠোঁটের বিবরণ... সানন্দা, উদিতার প্রচ্ছদে...
সবোঁপরি সোমত্ত তোমার বুক...
মাঝে মধ্যে আসো... কাউকে কাউকে ভালবাসো...
আগুন চায়ের কাপে... আগুন ঠোঁটে দাও আগুন চুমো...

কালও এসেছিলে ... ছিলে বহুক্ষণ... বহুক্ষণ...
তাড়াহুড়ো করে বেরুতে গিয়ে... দিয়েছিলে ছোট্ট একটু ছোঁয়া...
টের পাওনি তাই... হারিয়ে গেলে অতি দ্রুত...
আর কী করব বলো...

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ থেকে হঠাৎ বেরুলে...
আহ্লাদী উষ্ণতা যেমন কামড়ে ধরে...
অমনি করে ধরবো একদিন...
কোথায় হারাবে... সেদিন।

রোদ্দুর ভালবাসি ...

আমি রোদ্দুর ভালবাসি..
যার ডানায় ভর দিয়ে শিশিরের বিন্দুগুলো অনেক উপরে মেঘের দেশে উড়ে যায় ... স্থির হয়...

যে রোদ্দুর আমপাতার শিরা-উপশিরায় একলা বসে থাকে ...

আমের হা হয়ে যাওয়া বাকলের ফাটল দিয়ে
যখন পিঁপড়ের লম্বা সারি...
উপরে.. আরো উপরে উঠে যায়... তখন তাদের সাথে রোদ্দুরও...

বেলা বাড়তে বাড়তে রোদ্দুরের রং পাল্টায়...

লাল-কমলা-হলুদ-কমলা-লাল..

লাল রোদ ভালবাসি .. হলুদ রোদ ভালবাসি .. কমলা রোদ ভালবাসি..

রোদ্দুর ভালবাসি ...

আমি তো নিয়েছি কষ্ট ... কবিতা

জানা ছিল...
কবিতা এবং সুখ.. পরস্পর বিপরীত,
যার বুকে সুখ.. তার কবিতা হয় না..
আর কবির বুকে সুখ থাকে না ...
টুকরো টুকরো ব্যথায় ভরে থাকে বুক,
সেই বুকে ফলবতী বৃক্ষের মতন সারি সারি কবিতা...
আর তাদের পরিপুষ্ট পাতায় কান্নার দাগ..

জানা ছিল ...
কবিতা নিয়েছি বলে.. পালিয়েছে যত সুখ..
আর এই বুক .. অবধারিত ব্যথায় কাতর ..
গহীন সুনসান রাতে.. অপেক্ষায় থাকে... কখন সকাল হবে ...
আর প্রখর রোদের আঁচে চিৎকার ওঠে... আঁধার আসবে কখন ...

জানা ছিল.. ছেড়ে যাবে যাবতীয় সুখ..
আমি তো নিয়েছি কষ্ট .. কবিতা..

বুকের মাটিতে শেকড় ফুঁড়ে খাদ্য খোঁজে কবিতা ...
আর আবহাওয়ায় ছেড়ে দেয় বাষ্পীভূত দুঃখগুলো ।।

প্রখর রৌদ্রের দিন

আমি দেখেছি প্রখর রৌদ্রের দিন
ঝাঁঝালো হলুদ রোদ পিছলে পড়ে বাবলার পাতায়
আমার অলস দুপায় বড়ো বড়ো ঘাস
নেতিয়ে আছে ব্রহ্মপুত্রের বাতাসে
দুপুর বসেছে পাশে, বয়স বাড়ছে তারও..

কাশের সাদায় নির্বোধ বীজগুলো ফুটে আছে...
আমার কোলের কাছে শূন্য খাতা, হাতে পেনসিল,
আঁকা লেখা হচ্ছিল না কোনটাই...
দেখছিলাম কেবল রোদ.. আর ব্রহ্মপুত্রে ছোট ছোট ঢেউ ...
নিঃসঙ্গ কোন শুশুক ত্বরিতে শ্বাস নিয়ে ফিরে যায় জলের ঘরে..

ওপারে ধনচের বনে গুবরে শালিক..
আরো দূরে মহিষের ঝাঁকে কালো ফিঙ্গে..
রোদের প্রাচূর্যে ঝলসে ওঠে ওরা..
ওপরে একা আকাশ.. আরও একা হয় রোদের অত্যাচারে...

রং পেনসিল

(১)

রং পেনসিল.. ছবি হবে কাগজ জুড়ে..
সবুজ থাকবে অনেক অনেক .. সবুজ - সবুজ ..
গাছে - ঘাসে - টিয়ায় সবুজ ..
নদীর ঘাটে শ্যাওলা সবুজ..
আকাশটা নীল .. তার ছায়াতে নদীও নীল...
নদীর ঘাটে নৌকা ঘুমায়.. নীল নদীতে ..

রং পেনসিল .. ছবি হবে .. রঙিন ছবি ..

(২)

রং পেনসিল.. সবুজ রংটা ফুরিয়ে গেছে..
রং পেনসিল.. সবুজ রংটা কেউ দিলনা..
আমি এখন কালো রঙে সবুজ আকিঁ...

নীল রংটা কোত্থাও নেই
আকাশ নদী ধূসর আঁকি..

রং পেনসিল.. ছবি হল জীবন জুড়ে..
ধূসর আকাশ নদী বুকে ...
কালো সবুজ শুয়ে থাকে...

রং পেনসিল.. বড় বেলার ছবি...

পাথরটা

কেউ কি রেখেছে খোঁজ
সাগর শুকোচ্ছে রোজ

বেলাশেষের রাঙা আলোয় তার তীরে
একটা রাঙা পাথর আরও রাঙা হত

তাতে কার কী...

শুধু বিকেলটা হলেই একটা লাল মেঘ..
সেই রাঙা পাথরটার ওপর এসে..
যুতসই কিছু বলতে না পেরে... ঠাঁয় ভেসে থাকত,
গাঙচিলের দল .. মাঝে মধ্যে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিত ওদেরকে...

তারপর তো হাওয়া বদলাল,
অবশেষে একদিন.. লাল মেঘ বলে উঠল..
'' এখানে সাগর শুকোয়, কিছু জল উঠে এল,
ওরা যাবে দুরের দেশে,
তুমি... ''
পাথর নির্বাক...

তবু মেঘ অপেক্ষায় থাকে

বালিয়াড়ির ফাঁকে লবণ জমা পড়ে...
লাল কাঁকড়ার বসতি আরো দূরে সরে যায়..
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে একসময় মেঘটা চলেও যায়...

আর কোথাকার কোন পাথর
তার খোঁজ আর কে রাখে...

একদিন পাথর ভাঙ্গার লোক আসে...

তারপর..
বিকেলের সেই লাল মেঘটা..
আর কোনদিন খুঁজে পায়না সেই পাথরটাকে।।