বৃহস্পতিবার, ২৯ অক্টোবর, ২০০৯

গীটার

প্রতিটি দিন ঘরের কোণায় একটি গীটার..
জমছে ধুলো সাকুল্যে তার চারটি তারে..
একটি ছেলে হঠাৎ করে আদর করে..
কষ্টগুলো যখন তাকে জাপটে ধরে ..

হেমন্ত শেষ বিকেল এলে যখন ছেলে..
চুপটি করে খুব নীরবে নষ্ট হল..
বুড়ো গীটার কেউ জানে না কিসের ছলে..
এক জীবনের জন্যে সেই যে ঘর পালাল ......

মঙ্গলবার, ২৭ অক্টোবর, ২০০৯

একটি মেয়ে - ০১

একটি মেয়ে আছে বাতাসের মতন
আমি এই মেয়েটিকে ভালবাসি
তার বাঁ পায়ের বুড়ো আঙুলের নখ
হেমন্তের মেঘের মতন
যেখানে নেইল পলিশ নিষিদ্ধ
আমি চাই ...
আমি এই মেয়েটিকে চাই।

অদভুত অদভুত

মানুষ হাঁটছে খুব
ঝড়ের আঁধারে ডুব
অদভুত অদভুত

লালচে ঝড়ের নখ
আকাশে টাঙানো হোক
অদভুত অদভুত

পাতারা মেহগনির
জ্বলে থাকে অগভীর
অদভুত অদভুত

চাকায় ওড়না পেঁচায়
রিকশাঅলা বিড়ি খায়
অদভুত অদভুত

দুঃখপাখি

বুকের মধ্যে দুঃখ থাকে
চুপটি করে দুঃখ থাকে
দুঃখপাখির নাম জানিনা
- কেউ জানেনা..
কোথায় জন্ম তাও জানিনা
জানা ছিল হয়তো আগে
এখন তো নেই
নেই জানা নেই।
তবুও এমন দুঃখপাখি
বসত করে বুকের ভেতর,
উড়ে আসে কল্পনাতে
হাসি - গানে জড়িয়ে থাকে
নিবিড় হয়ে
উথলে ওঠে, কবিতাতে।।

তোমায় ঘিরে কবিতারা

ছেড়ে গেছ সেই কবে... তারিখ ভুলে গেছি,
কবিতার কলম দিয়ে গেছ হাতে,
আজ জানি... ভালবাসতাম না তোমায়,
কিছু কবিতা কিন্তু তোমায় ঘিরে আজো সাঁতরায় -
আমার সেই সন্তানদের আমি ভালবাসি,
ভালবাসাগুলো বাড়ছে.. যত দিন যাচ্ছে,

এখন আর কান্না হয়না..
তবে উদ্দাম আবেগে থরথরিয়ে কাঁপি আজও,
আমি যে কবিতা ভালবাসি...

কিন্তু.. কবিতা শেষ হয়ে গেলে...
বুকের ভেতর কী অর্থহীন কষ্ট!

একটা একা পাখি এবং বর্ষা

কোন এক হিমকুয়াশার দেশ থেকে
এসেছিল পাখি এক, একা

সবুজ বনের দেশে সে বর্ষায় ভিজে গেল
কেউ টের পেলনা...
বর্ষার সাথে তার প্রেম হয়ে গেল..
বর্ষার আশায় পাখি ছিল অপেক্ষায়,
বর্ষা কিন্তু আর আসেনি..
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে মরে গেল পাখি,

যেদিন পাখির শেষ পালকটা মিশে গেল বনতলে..
সেইদিন -
আকাশ ভেঙ্গে আবার বর্ষা এল, কেন?
খোঁজ নিয়ে জানা গেল,
আরো এক একা পাখি এসেছে,
অন্য কোন দেশ থেকে...

মুগ্ধ হচ্ছি

কোন জিজ্ঞাসা নেই
কেবল মুগ্ধ হচ্ছি
স্বর্গ আর পৃথিবীর ব্যবধান নেমে গেছে এক পর্দায়
মুগ্ধ হচ্ছি
এক পশলা বৃষ্টি হচ্ছে
ছোট ছোট সুখ হচ্ছে
মুগ্ধ হচ্ছি
স্বর্গ ছেড়ে দিচ্ছি
কড়া এক কাপ চা হবে আসন্ন সন্ধ্যায়
আশ্বস্ত হচ্ছি
মুগ্ধ হচ্ছি

দুঃখ করোনা...

দুঃখ করোনা প্রিয়তমা
ভালবাসা ছোট্ট বলেই মিষ্টি
দুঃখ করোনা প্রিয়তমা

আবার কেউ ভালবাসবে
সেই ছোট্ট মিষ্টি ভালবাসা
দুঃখ করোনা...
প্রিয়তমা

কবিতা লিখতে হবে...
আবার কবি হব...
দুঃখ করোনা প্রিয়তমা
কবিরা চিরকাল ভালবাসেনা।।

ঈশ্বর

অভিযোগ নেই, শুধু খোঁজ চাই ,
ছোট ছোট সুখ দিয়েছ বলে ধন্যবাদ, নিয়ে যাও
পরিতৃপ্ত আমি, ভয় নেই
চুপ করে ঘুরে যাও।।

সোমবার, ২৬ অক্টোবর, ২০০৯

নারী হয়ে জন্মালেই বোধহয় বেশি ভাল হত...

গতরাতে আমার খুব প্রিয় এক বন্ধুর মাথা
আমার কোলে রেখে তাতে হাত বুলোতে বুলোতে
মনে হল, নারী হয়ে জন্মালে বোধহয়
খুব একটা খারাপ হতো না,
কে জানে.. হয়তোবা জিতেই যেতাম.. জীবনের বাজি।

আমার সমবয়সী মেয়েদের চোখের দিকে তাকালে
টের পাই, ওরা আমার চামড়া.. চোখ ভেদ করে
অনেক ভেতরে.. মনটাকে নাড়ছে,
কেমন যেন গুটিয়ে যাই নিজের মধ্যে,
প্রকৃতি হয়তোবা নারীকেই উর্ধ্বতন করে সৃষ্টি করেছিল..

একজন নারী, একটা পুরুষের চাইতে অনেক গভীর..
নারী ভালবাসতে জানে, নিঃস্বার্থে ভালবাসতে পারে,
আবার সে এও জানে..
ভালবাসার সত্যি প্রতিদান সে পাবে না..

অবাক লাগে, যখন দেখি পুরুষ ধরে নেয়
নারী তার শরীরে যাবতীয় রস জমিয়ে রাখে..
যাতে তার পুরুষকে সবচেয়ে বেশি সময় ধরে রাখা যায়,

এজন্যই হয়তোবা.. কাউকে বলতে শুনিনি
ধন্য এ পুরুষ জীবন..

নারী হয়ে জন্মালেই বোধহয়
বেশি ভাল হত..
জিতে যেতাম .. জীবনের বাজি।।

মনুষ্যত্ব নাকি পৌরুষ

একখন্ড মাংসের আগ্রাসন -
তাতেই আমি আর মানুষ নই.. পুরুষ..

আমার সমবয়সী যে নারীটি অনায়াসে..
মানবী এবং কেবল নারীর মাঝামাঝি..
একটা অবস্থান করে নিতে পারে -
সেখানে আমার একমাত্র অন্তরায়
সেই একখন্ড মাংসের আগ্রাসন..

আমি যতটা না মানুষ -
তার থেকে অ-নেক বেশি পুরুষ।

ভোগবাদী চেতনা,
নাক, কান, চোখ এবং ত্বক ফুঁড়ে..
হুড়মুড় করে ঢোকে..
কাকে ধরে রাখবো -
মনুষ্যত্ব নাকি পৌরুষ!!

কবিতা কী করে লিখবো আমি...

আমার প্রবল উচ্চারণের স্বপ্নটা ফিকে হযে যাচ্ছে ক্রমশঃ
বুকের যেখানটায় সাহস আছে বলে ভাবতাম..
আজ সেখানে কিছু নেই..
কোনদিন ছিল কিনা.. বলতে পারিনা,

সত্যিই কি একদিন সাহস ছিল -
বুকের মধ্যে সাহস নিয়ে কখনো লিখেছি কি ..
আজো একটা শব্দ লিখতে শিখিনি..
কবিতা কী করে লিখবো আমি...

জানিনা আর কোন স্বপ্ন ছিল কিনা -
আমি তো কেবল একটি কবিতা লিখতে চেয়েছি,
যে কবিতায় থাকবে সত্য, থাকবে বারুদ,
থাকবে ভালবাসা, পাগলামি..
আর থাকবে সহজ অথচ প্রবল উচ্চারণ।

অথচ.. কবিতা কী লিখব..
একটা শব্দও লিখতে শিখিনি..

রবিবার, ২৫ অক্টোবর, ২০০৯

আকাশের টুকরোগুলো...

হয়তো মেঘের ওপাশে রোদ জ্বলজ্বল..
তাই মেঘ জ্বলে আছে আকাশে,
কিছু কিছু পাখি দূরের কোন গাছে ডাকাডাকি করে
গম্ভীর আম আর নারকেল পাতারা -
আকাশটাকে টুকরো টুকরো করে কাটে..
আকাশের টুকরোগুলো জানলা দিয়ে ঢোকে,

মাথার পেছনে চুল বেড়ে ওঠে..
ওপরে পাখা ঘুরছে সেই কবে থেকে..
ডানে বাঁয়ে জীবনের নানা অনুষঙ্গ..
জায়গা নেই..
আকাশের টুকরোগুলো তাই ঢুকে যায় মাথায়..
লাগামহীন ভাবনাদের সাথে ওরা দৌড়োয়..
ভীষণবেগে.. এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্তে..

সবাই কি গন্তব্যে পৌঁছায় ...

সবাই কি গন্তব্যে পৌঁছায়.. পৌঁছুতে পারে..

ভুল ভুল সব স্বপ্ন থেকে কবিতা এসেছে..
আর চরম শূন্যতার বুক চিরে প্রেম,

আজ নিতান্ত নিঃসঙ্গ এক পাথর সেজে..
শরীরের ভাঁজে ধুলো জমতে দেখি..

আমায় একা করে দিল গাঙচিল..
সময়ের গাঙচিল।।

ক্ষ্যাপারুন...

শব্দহীনতা পাশে জেগে ছিল সারারাত ..
আর ছিলনা কেউ..

ক্ষ্যাপারুন জানিস..
মাঝে মাঝে আমার ঘাসগুলো পাখি হয়ে উড়ে যায়..
ঐ ওখানে -
যেখানে দুর্বল বাতাস ছুটে চলে পরিত্যক্ত সময়ের ভাঁজে।

যেখানে আলগোছে চুমু খাওয়া পাপ,
অপরিণত অজগরের মত বন্ধ্যা সন্তান প্রসব।

আশ্চর্য !
ওখানেই আমি প্রেমিক,
বীরপুঙ্গব সেজে উল্লাস করি -
প্রিয়ার সমগ্র সম্ভ্রম হরণের কষ্টে।

ক্ষ্যাপারুন..
আজ তোর রক্তে দোষ..

সত্যি করে বল..
আজও কি তুই বাতাসের গন্ধ শুকে বেড়াস..
আমার বুকে..

ছন্দার কাছে চিঠি - ০১

এমন সন্ধ্যা জীবনে আরও কয়েকবার এসেছে,
দুঃখের স্মৃতিগুলো মনে করতে চাচ্ছি না..
তবে এই মুহূর্তে তোমার সাথে কথা বলা প্রয়োজন,
তেমন সিরিয়াস আলাপচারিতা নয়..
যেমন ধরো, কেমন আছ.. কি করছ.. এই তো..
কিন্তু তুমি তো বলবে না..
না না .. অপরাধ আমারই,
তোমায় কোন দোষ দেব না.. কখনই না..
কিন্তু জান.. যা কিছু করেছি..
তাতে আমি অনুতপ্ত নই মোটেই..
আমার যতটুকু করা সম্ভব.. তাই করেছি,
এর থেকে ভাল কিছু করতে পারতাম না..
কিন্তু মনটাকে আজও সামলাতে পারিনি,
স্বীকার করছি.. আমি স্বার্থপর.. নতমস্তকে..
সবসময় নিজেরটাই বুঝি.. কিন্তু..
মানুষের ভেতরটা কি কখনও পরিবর্তন করা সম্ভব..
নাকি করা উচিত.. আমি তো এমনই...
মনটাকে সামলাতে পারিনা..
তোমাকে বুকে জড়িয়ে রাখতে ইচ্ছে.. পারিনা..
তোমার কোন দোষ নেই..
তুমি এখন যা করছ তাতে ভুল ধরার কোন উপায় নেই..
যা ভাল ভাবছ তাই করছ..
কিন্তু মন তো মানছে না..
কি আর করবো বল..
ভালবাসি বলতে আজ বড় কষ্ট হয়..
অপরাধী লাগে...

মঙ্গলবার, ৬ অক্টোবর, ২০০৯

আমাদের বেলা হয় কি ...

যদি আকাশে তাকাও... মেঘগুলো বলে দেবে...
কতকাল সেই স্বচ্ছ রোদ নেই...
ক্লান্তি ছুঁয়ে যায় তার ছোট্ট কপাল...

যদি ভাবো... নদী একাই ঢেউ গুনেছে...
ওকে জিজ্ঞেস করো...
ওর বুকেও কান্নার দাগ লেগে...

এক টুকরো সুখে...
কেমন অদ্ভুত এই পৃথিবী...

অন্য কোথাও...
আমাদের চেনা পৃথিবী থেকে... অনেক দূরে...

কিছুক্ষণ পর

কিছুক্ষণ পর...
যখন রং ধরবে পূবের আকাশে...
তখন...
একলা পাখি এক...
তার সর্বশেষ আশ্রয় আঁকড়ে রাখবার ব্যর্থ চেষ্টায় রত থাকবে...

কে জানে...
এটাই হয়তো কাজ সর্বশেষ...
যা করার ছিল বাকী...

আকুতি : এক

সমস্ত বৈশাখের রোদ...
কেবল শূন্যতায়...
ভবঘুরে কাকেদের সাথে...
এভবে আর কবে খেলেছিল...

জানিনা আবার কবে আমার এই অসার আঙুলগুলো...
জাগবে শীতনিদ্রা হতে...

জানিনা...আবার বৃষ্টি এলে কোনোদিন..
ভিজে চুল নিয়ে দাঁড়াব তোমার দরজায়...
হয়তো বলে ফেলবো ভুলে...আমায় মনে রেখেছো তো...
আমি যে আজো ভুলিনি...

কেন আমাকেই বইতে হয় যাবতীয় ক্লান্তি...
কেন আমিই হবো সর্বশেষ...
খাপছাড়া... দমবন্ধ...
ভ্যাপসা পৃথিবীতে...

আমিই বোধহয় ভালবাসতে জানিনা

এখন অনেক রোদ...
আমার অজস্র ঘামের মিছিল...
আনমনে খুজেঁছে... ঢেকেছ আঁচলে তোমার... বোশেখের রোদ...

জানিনা কখন চেয়েছি রোদ...
হয়তোবা ধুলো... গাঢ় পৃথিবীর ক্ষতকে ঘিরে...
মেঘেদের ছায়া বুকে ... বন্ধ করি দু'চোখ...
দেখি না তোমায়...

আজ তুমি কোথায আছ ...
কথা ছিল... বুকের খুব গভীরে কোথাও ... থাকবে ...
কথা রাখনি ...

আমিই বোধহয় ভালবাসতে জানিনা...
ভালবাসতে পারিনা...

যেন আকাশের বুক তুলোর নরমে আবছা

আমরা দুজন থাকি সমান্তরাল
সে যখন নীল...অনায়াসে উড়ে যাই দু'চোখের পাঁপড়ি যেদিকে...
নিঃশ্বাসের আনন্দে আঁকা অস্পষ্ট ছবি এক...
বাঁচার উচ্ছাসে গেয়ে ওঠা প্রাগৈতিহাসিক গান কোন...

ভীষণ আদরে হয়ে গেলে সাদা...
কপালের ঘামে আলতো ভালবাসায় তারে দিই পবন চুম্বন...
পাশাপাশি সমান্তরালে থাকা অনন্তযুগের সুহৃদ...

কেঁদে ফেলে যদি সে কখনো...
আমার প্রাচীন হাতের তালুতে তার অশ্রুর ফোঁটাগুলো ধ'রে...
না হয় পার্থিব এই গায়ে মেখে...
বসে রব কোনদিন সে রোদেলা হবে তার অপেক্ষায়...

জীবন আমাকে

জীবন আমাকে কবে আলগোছে দিয়ে গেছে ফাঁকি
নিকষ আঁধারে আজ পথ আলো করে সে জোনাকী

রোদ হারা শুয়ে আছি জেনেছে কী কোনোদিন কেউ
কার আশে গুণে চলি সীমাহীন কবিতার ঢেউ

বৃষ্টি এসেছিল

বৃষ্টি এসেছিল
ভিজিয়ে দিয়েছে বুকের খুব ভেতরে কোথাও...

কী করে বলি কোথায়
চোখ কেবল বাইরে ঘুরে ঘুরে মরে

ভাবতে ভাবতে ডাক এসে যায়
আমার ভীষণ প্রিয় কাঁঠালীচাঁপার বুকের ক্ষত বড় হয়
আমার চোখে জল ছিল না
তবুও দেথি ভিজে গেছে পাঁপড়িগুলো

আমিই পারিনি

আমিই পারিনি
ও কী করে পারবে বলো ...
সবার কি আর সবকিছু সয় ...

সামান্য ন্যাপকিন... মৃত
তোমার মাংসল গালের অত্যাচারে...

টিশার্টের গ্রাফিক্স পাহাড় পেরুচ্ছে...

জান কী...
কালকের সুখ চুরি যায়...
এই সন্ধ্যায়...

তোমার কাঁধের ব্যাকরণ...
চুলের আয়োজন...
বায়বীয় রমণ...
নি খরচায়...
নি স্পর্শে...

ম্যানিকুইন সুন্দরী

মাঝে মাঝে ম্যানিকুইন
ভুল হয় সুন্দরী ভেবে...
তবে তুমি সুন্দরীই ছিলে...

তুমি ছিলে শ্যামলা, যুবতী, সুলক্ষণা...
তোমার ঠোঁটের বিবরণ... সানন্দা, উদিতার প্রচ্ছদে...
সবোঁপরি সোমত্ত তোমার বুক...
মাঝে মধ্যে আসো... কাউকে কাউকে ভালবাসো...
আগুন চায়ের কাপে... আগুন ঠোঁটে দাও আগুন চুমো...

কালও এসেছিলে ... ছিলে বহুক্ষণ... বহুক্ষণ...
তাড়াহুড়ো করে বেরুতে গিয়ে... দিয়েছিলে ছোট্ট একটু ছোঁয়া...
টের পাওনি তাই... হারিয়ে গেলে অতি দ্রুত...
আর কী করব বলো...

শীতাতপ নিয়ন্ত্রণ থেকে হঠাৎ বেরুলে...
আহ্লাদী উষ্ণতা যেমন কামড়ে ধরে...
অমনি করে ধরবো একদিন...
কোথায় হারাবে... সেদিন।

রোদ্দুর ভালবাসি ...

আমি রোদ্দুর ভালবাসি..
যার ডানায় ভর দিয়ে শিশিরের বিন্দুগুলো অনেক উপরে মেঘের দেশে উড়ে যায় ... স্থির হয়...

যে রোদ্দুর আমপাতার শিরা-উপশিরায় একলা বসে থাকে ...

আমের হা হয়ে যাওয়া বাকলের ফাটল দিয়ে
যখন পিঁপড়ের লম্বা সারি...
উপরে.. আরো উপরে উঠে যায়... তখন তাদের সাথে রোদ্দুরও...

বেলা বাড়তে বাড়তে রোদ্দুরের রং পাল্টায়...

লাল-কমলা-হলুদ-কমলা-লাল..

লাল রোদ ভালবাসি .. হলুদ রোদ ভালবাসি .. কমলা রোদ ভালবাসি..

রোদ্দুর ভালবাসি ...

আমি তো নিয়েছি কষ্ট ... কবিতা

জানা ছিল...
কবিতা এবং সুখ.. পরস্পর বিপরীত,
যার বুকে সুখ.. তার কবিতা হয় না..
আর কবির বুকে সুখ থাকে না ...
টুকরো টুকরো ব্যথায় ভরে থাকে বুক,
সেই বুকে ফলবতী বৃক্ষের মতন সারি সারি কবিতা...
আর তাদের পরিপুষ্ট পাতায় কান্নার দাগ..

জানা ছিল ...
কবিতা নিয়েছি বলে.. পালিয়েছে যত সুখ..
আর এই বুক .. অবধারিত ব্যথায় কাতর ..
গহীন সুনসান রাতে.. অপেক্ষায় থাকে... কখন সকাল হবে ...
আর প্রখর রোদের আঁচে চিৎকার ওঠে... আঁধার আসবে কখন ...

জানা ছিল.. ছেড়ে যাবে যাবতীয় সুখ..
আমি তো নিয়েছি কষ্ট .. কবিতা..

বুকের মাটিতে শেকড় ফুঁড়ে খাদ্য খোঁজে কবিতা ...
আর আবহাওয়ায় ছেড়ে দেয় বাষ্পীভূত দুঃখগুলো ।।

প্রখর রৌদ্রের দিন

আমি দেখেছি প্রখর রৌদ্রের দিন
ঝাঁঝালো হলুদ রোদ পিছলে পড়ে বাবলার পাতায়
আমার অলস দুপায় বড়ো বড়ো ঘাস
নেতিয়ে আছে ব্রহ্মপুত্রের বাতাসে
দুপুর বসেছে পাশে, বয়স বাড়ছে তারও..

কাশের সাদায় নির্বোধ বীজগুলো ফুটে আছে...
আমার কোলের কাছে শূন্য খাতা, হাতে পেনসিল,
আঁকা লেখা হচ্ছিল না কোনটাই...
দেখছিলাম কেবল রোদ.. আর ব্রহ্মপুত্রে ছোট ছোট ঢেউ ...
নিঃসঙ্গ কোন শুশুক ত্বরিতে শ্বাস নিয়ে ফিরে যায় জলের ঘরে..

ওপারে ধনচের বনে গুবরে শালিক..
আরো দূরে মহিষের ঝাঁকে কালো ফিঙ্গে..
রোদের প্রাচূর্যে ঝলসে ওঠে ওরা..
ওপরে একা আকাশ.. আরও একা হয় রোদের অত্যাচারে...

রং পেনসিল

(১)

রং পেনসিল.. ছবি হবে কাগজ জুড়ে..
সবুজ থাকবে অনেক অনেক .. সবুজ - সবুজ ..
গাছে - ঘাসে - টিয়ায় সবুজ ..
নদীর ঘাটে শ্যাওলা সবুজ..
আকাশটা নীল .. তার ছায়াতে নদীও নীল...
নদীর ঘাটে নৌকা ঘুমায়.. নীল নদীতে ..

রং পেনসিল .. ছবি হবে .. রঙিন ছবি ..

(২)

রং পেনসিল.. সবুজ রংটা ফুরিয়ে গেছে..
রং পেনসিল.. সবুজ রংটা কেউ দিলনা..
আমি এখন কালো রঙে সবুজ আকিঁ...

নীল রংটা কোত্থাও নেই
আকাশ নদী ধূসর আঁকি..

রং পেনসিল.. ছবি হল জীবন জুড়ে..
ধূসর আকাশ নদী বুকে ...
কালো সবুজ শুয়ে থাকে...

রং পেনসিল.. বড় বেলার ছবি...

পাথরটা

কেউ কি রেখেছে খোঁজ
সাগর শুকোচ্ছে রোজ

বেলাশেষের রাঙা আলোয় তার তীরে
একটা রাঙা পাথর আরও রাঙা হত

তাতে কার কী...

শুধু বিকেলটা হলেই একটা লাল মেঘ..
সেই রাঙা পাথরটার ওপর এসে..
যুতসই কিছু বলতে না পেরে... ঠাঁয় ভেসে থাকত,
গাঙচিলের দল .. মাঝে মধ্যে ঘাড় ঘুরিয়ে দেখে নিত ওদেরকে...

তারপর তো হাওয়া বদলাল,
অবশেষে একদিন.. লাল মেঘ বলে উঠল..
'' এখানে সাগর শুকোয়, কিছু জল উঠে এল,
ওরা যাবে দুরের দেশে,
তুমি... ''
পাথর নির্বাক...

তবু মেঘ অপেক্ষায় থাকে

বালিয়াড়ির ফাঁকে লবণ জমা পড়ে...
লাল কাঁকড়ার বসতি আরো দূরে সরে যায়..
অপেক্ষায় থাকতে থাকতে একসময় মেঘটা চলেও যায়...

আর কোথাকার কোন পাথর
তার খোঁজ আর কে রাখে...

একদিন পাথর ভাঙ্গার লোক আসে...

তারপর..
বিকেলের সেই লাল মেঘটা..
আর কোনদিন খুঁজে পায়না সেই পাথরটাকে।।