বুধবার, ৩০ ডিসেম্বর, ২০০৯

এই চিঠিটা মায়ের জন্যে

মাগো -
আমি তোমার খোকন
আমার ওপর অনেক রাগ, তাই না মা
বলেছিলাম ফিরব, পারলাম না...
এখন সৃষ্টিকর্তার কাছে প্রার্থনা
চিঠিটা যেন শেষ করে যেতে পারি,

ওরা অনেক চেষ্টা করল মা, পারল না...
গুলিটা এমন অজায়গায় লেগেছে
রক্ত আর থামছেই না, ওরা বলেছে -
শেষ রাত অবধি বাঁচলে ভাগ্য,

বলেছিলাম না মা,
দেশটা একদিন স্বাধীন হবেই...
আমি নেই তো কী হয়েছে
আরো কত লক্ষ লক্ষ সন্তান তোমার,

জানি মাগো -
চিঠিখানা পড়তে পড়তে
তোমার চোখের জল বাঁধ মানবে না,
কিন্তু লিখতে তো হবেই আমায়,

রক্ত অনেক লাল মা, তবু -
যুগে যুগে স্বাধীকারের জন্যে
মানুষ তার বুকের রক্ত দিয়েছে,
তবু মানুষ কেন মানুষকে খুন করবে...
মানুষ কেন মানুষকে বাঁচতে দেবে না...
কেন এক ভাইয়ের রক্তে আরেক ভাই
হাত রাঙাবে, তারা কেমন মানুষ...

তুমি আমার জন্মদাত্রী মা
এদেশ আমার জন্মভূমি মা
তাই তো যুদ্ধে এলাম
মা'কে মুক্ত করতে যুদ্ধে এলাম,
হায়েনার পালকে নিশ্চিহ্ন করতে
যুদ্ধে এলাম, বোনের অপমানের শোধ নিতে
যুদ্ধে এলাম, কিন্তু মাগো -
শেষটা দেখে যেতে পারলাম না ।

মাগো, কত্ত ভালবাসি তোমায়, জানো...
তুমি কাঁদবেনা বলো,
মাথা উঁচু করে হাঁটবে তুমি,
যে সন্তানেরা তাদের মাকে হারিয়েছে -
তাদের বুকে তুলে নেবে,
আমার ছোট্ট ভাইটিকে বলো...
তার ছেলে-মেয়েকে সে যেন -
আমার কথা, আমাদের কথা বলে,
ওরা যেন আমাদের মনে রাখে...
যে মেয়েটিকে
তুমি তোমার বউ বানাতে চেয়েছিলে,
তাকে বলো -
সে যেন আমায় ক্ষমা করে,

নতুন দেশের নতুন মাটিতে
আমার নামে
একটা দোপাটির চারা লাগিও,
আর তোমরা ভাল থেকো ।

বুধবার, ২৩ ডিসেম্বর, ২০০৯

একাত্তরে আমার পিতা রাজাকার ছিলেন

আমার একজন পিতা আছেন
আমি তাকে আব্বা বলে ডাকতাম...
আমার খুব মনে আছে,
তিনি যখন কোরান পড়তেন -
সুবেহ সাদিকের স্বর্গীয় নীরবতার মধ্যে
তার কণ্ঠস্বর অদ্ভুতভাবে বেজে উঠত
তার সৌম্য অবয়ব হতে কোন এক
অন্য ভুবনের আলো ঠিকরে বেরুতে দেখতাম -
আমি, তখন ভুল শুনতাম
আমার দেখায় ভুল ছিল ।

আমার একজন আম্মাও ছিলেন
আমি তাকে কোনদিন হাসতে শুনিনি...
সারাটা বছর থাকতেন রোগাক্রান্ত
পর্দার আড়ালে দুর্বল, শীর্ণ, কালো
কোন গভীর রাতে ঘুম ভেঙে গেলে
আম্মার ফোঁপানো কান্নার শব্দ শুনতে পেতাম,
আমি তাকে বেশিদিন আম্মা ডাকতে পারিনি -
আমার বয়স যখন ছয়,
পিতা দ্বিতীয়বার বিবাহ করলেন...
কিছুদিন পর মারা গেলেন আমার আম্মা,
আমার আম্মা ...

আমার পিতার আরও তিন ছেলে ছিল
তাই বোধহয় তিনি আমাকে -
আদর করার মত যথেষ্ট সময় পাননি
নাকী আমি কালো ব'লে ভ্রু কুঁচকাতেন...
আজও জানি না,
একা একা বড় হয়েছি, খুব একা...

বয়স তখন উনিশ ছুঁই ছুঁই...
শেখ মুজিব মুক্তির ডাক দিলেন,
আগুন জ্বলা তার অনবদ্য ভাষণে...
আমার পিতা এই দেবতার মতন ব্যক্তিকে মোনাফেক, কাফের
এবং ইসলামের ঘোরতর শত্রু হিসেবে সাব্যস্ত করলেন,
পাকিস্তান.. পাকিস্তান.. মাতম শুরু করলেন
এপ্রিলের মাঝামাঝি, পাকসেনারা গ্রামে আসতে লাগল
আমার পিতার সেকী উচ্ছ্বাস,
ভীষণ তৎপর হয়ে উঠলেন তিনি...
পাকসেনাদের সামনে তিনি এমনভাবে গলে গলে পড়তেন যে -
ভ্রম হত.. তারা বোধহয় আল্লাহর পাঠানো ফেরেশতা...
এই ফেরেশতাদের ছিল পিশাচের মতন ক্ষুধা.
সব খেত ওরা, স-ব... যাকে সন্দেহ হত, গুলি করে মারত...
মেয়েদের ধরে ধরে খুবলে খেত...
এক দুপুরে পিতা, আমার ছোটখালাকে নিয়ে গেলেন -
পাকসেনাদের ক্যাম্পে, আমি তাকে আর কোনদিন দেখিনি...
আমার জগতটুকু ভীষণ এক আগুনে পুড়িয়ে দিলো কেউ...
আমি সেই রাতিই পালিয়ে গেলাম... যুদ্ধে গেলাম...

আমি তখন রংপুরের পথে,
লোক মারফত জানতে পারলাম -
মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের শাস্তিস্বরূপ
পিতা আমায় ত্যাজ্য ঘোষণা করেছেন,
আর এই মহান কর্মের স্বীকৃতিস্বরূপ -
পাকসেনারা তাকে আলবদর বাহিনীর কমান্ডার বানিয়েছে
আমার পিতা...

যুদ্ধের সেই দিনগুলো আজও চোখের সামনে জ্বলজ্বল...
রক্তের মহাসমুদ্র সাঁতরে আমার বাংলাদেশ স্বাধীন হ'ল ।

আট মাস পর.. ডিসেম্বরের আঠারো তারিখ..
গ্রামে ফিরলাম আমি,
দেখলাম আমাদের বাড়িটাকে পোড়ানো হয়েছে,
শুনলাম পিতার দ্বিতীয় স্ত্রী, তিন পুত্র কেউ-ই আর বেঁচে নেই,
পিতাকে বেঁধে রাখা হয়েছে.. মেরে ফেলা হবে হয়তো...
পিতা আমায় দেখে চমকে উঠলেন...
তার সমগ্র শরীর কোন এক উচ্ছ্বাসে কেঁপে কেঁপে উঠছিল,
আমি পিঠ সোজা করে দাঁড়ালাম,
ভাবলাম মেরেই ফেলুক.. এই পশুটার শাস্তি হওয়া উচিত...
পরে আর পারিনি...

পিতা স-ব ভুলে গিয়ে আমায় গ্রহণ করতে চাইলেন
কিন্তু আমি তার কাছে আর ফিরে যেতে পারিনি...
আমি এখন এক সুতার কলে কাজ করি,
ভয় এবং দুশ্চিন্তার বিষয় এই, পিতা এখন
মস্ত এক নেতা হয়েছেন, স্ত্রী-পুত্র-কন্যা নিয়ে
তার এখন বিলাসী জীবন...
মন্ত্রীও নাকি হয়ে যেতে পারেন সামনের নির্বাচনে...
কী করেছি আমি... কত বড় পাপ...
অপরাধবোধে, এখন নিজের সামনে মাথা তুলে দাঁড়াতে পারিনা,
পারিনা...

আমার পিতা এখনও আছেন -
আমি ভুলেও তাকে আব্বা বলে ডাকিনা...

দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে নাৎসীদের হাতে নিহত ষাট লক্ষ পোলিশের উদ্দেশ্যে

যাবার মুহূর্তে আমার প্রেমিকা জিজ্ঞেস করছিল বার বার, আমি ফিরবো কি-না যুদ্ধ শেষে
ওই মুহূর্তে ওর চোখে ছিল কেবল ভয় আর অনিশ্চয়তা
লাইলাকের মতোন ওর হাতে রেখে আমার হাত, আমি হেসেছিলাম একটুখানি
সাহস কিংবা নিশ্চয়তা দেয়ার মত তেমন কিছুই পারিনি বলতে ।

আমরা তখন ডানজিনের পথে, হঠাৎ খবর পেলাম
নাযীরা ঢুকে পড়েছে ওয়ারশ-এ,
ওরা প্রতিটি বাড়ি, দোকান, ইমারত, স্কুল, সরাইখানা ডিনামাইটে উড়িয়ে দিয়েছে
আমার পরিবারের সবাইকে, আমার প্রেমিকাকে ধরে নিয়ে গেছ আউসভিৎসে,
নাযীদের ট্যাংকগুলো যখন পশ্চিম সীমান্ত বিদীর্ণ করছিল
আমাদের পোমোরস্কা ভাইয়েরা তখন ঢাল আর তলোয়ার নিয়ে
কামানের সামনে দাঁড়িয়েছিল নিশ্চিত মৃত্যুকে মেনে, বুক পেতে;
ডানজিন বন্দরে আমরা একশো উননব্বইজন সহযোদ্ধা
নাযীদের শ্লেসুইটগ হরস্টিনকে আটকে রেখেছিলাম টানা সাত দিন,
তবু হয়নি শেষ রক্ষা -

এক মাসের মধ্যে, শুধু ওয়ারশ-এই শহীদ হল আমাদের আড়াই লক্ষ সহযোদ্ধা...
তিন মাসের ভেতর আমাদের মাতৃভূমিকে ওরা ধ্বংসস্তুপে পরিণত করলো...
আমাদের পিতা, মাতা, ভাইকে গ্যাস চেম্বারে পুড়িয়ে মারা হল..
বিষাক্ত গ্যাসের ভেতর একটু নিঃশ্বাসের জন্য আঁচড়ে কামড়ে পাহাড় হ'য়ে থাকা
লাশের স্তুপের উপর আমার প্রেমিকার মুখটা হয়তোবা ফুটে ছিলো কোনো নীল পদ্মের মত...

আমাদের ষাট লক্ষ প্রাণের দামে যে অভ্যুত্থান এলো, তা ব্যর্থ হলো...
সোভিয়েতরা এগিয়ে এলোনা আমরা কমিউনিস্ট নই বলে,
এই বর্বরতাকে ওরা মুছে দিতে চাইলো ইতিহাসের পাতা থেকে,
আমাদের এই ত্যাগ তবু যাবে না মুছে কোনদিন-
মাতলোয়া আর ভিসতুলার শপথ,
ভবিষ্যতের পোলিশদের মনে গাঁথা থাকবে, তারা মনে রাখবে...
নাযীরা হন্তারক আর সোভিয়েতরা বিশ্বাসঘাতক
আমরা ষাট লক্ষ শহীদ, মিশে থাকবো
ওয়ারশ, সাপুত, গিদানস্কের জলে-স্থলে-বাতাসে
বেঁচে থাকবো আমাদের উত্তরসূরীদের অন্তরে...
বয়ে যাবো তাদের ধমনীতে-শিরায়-উপশিরায়...
অনন্তকাল ।।




টীকাঃ-
ডানজিন - জার্মানীর একটি নৌবন্দর
নাযী - নাৎসী (হিটলারের সৈন্যবাহিনী)
ওয়ারশ - পোল্যান্ডের রাজধানী
আউসভিৎস - নাৎসীদের কনসেনট্রেশন ক্যাম্প
পোমোরস্কা - অশ্বারোহী সৈন্যদল (ব্রিগেড)
শ্লেসুইটগ হরস্টিন - জার্মান রণতরী
মাতলোয়া ও ভিসতুলা - পোল্যান্ডের দুটি প্রধান নদী
সাপুত ও গিদানস্ক - পোল্যান্ডের দুটি প্রধান শহর

সোমবার, ২১ ডিসেম্বর, ২০০৯

আমি একটা শূন্য খাম

(৫মে,২০০৭)

ইচ্ছে করে একটি খাম পাঠাই
তোমার কাছে...
হয়তো একদিন পাঠাবো,
কোন এক সকালে তোমার ঘরের দরজা খুলে
হঠাৎ আবিষ্কার করবে খামটি
অবাক হবে... ভাববে কোত্থেকে এলো,
হলুদ একটা খাম,
তার উপরে বড় বড় অক্ষরে তোমার নাম,
প্রেরকের নাম নেই,
তোমার ভ্রু কুঁচকে যাবে, সেই ভ্রু...
যে পরিমাণ বিরক্তি নিয়ে খামটা খুলবে,
খোলার পর সেটি দ্বিগুণ হবে, কেননা
খামের ভেতর কিছুই নেই, জানি
তখ্খুনি খামটাকে ছুঁড়ে ফেলে দেবে..
জানালার বাইরে, বহু দূরে...
আমি তখন প্রচন্ড রোদের মধ্যে,
মানুষের ভীড়ে হারিয়ে গেছি...
শূন্য একটা খাম..
আমার নবতম সংস্করণ ।।

কবিতাগ্রস্ত

(০১অক্টোবর,২০০৮)

কবি হবার ইচ্ছে ছিলনা,
কবিতা আমায় ধরলও না,
তবু কেন একটু একটু কষ্ট লাগে...

জারুলপোকায় খেয়ে গেছে, বুকের অনেকখানি
বাকীটুকু নির্বেদ... জ্যোৎস্নায় কিংবা অমাবস্যায়
স্বপ্নঘোর প্রহর শেষে,
অন্ধকারের ব্যবচ্ছেদে,
আবছা আকাশের ছায়ায় খুঁজে পাই-
উইপোকায় কাটা সেই রাতের ডায়েরীটা...

যে নদীর জল ছুঁতে পারিনি কোনদিন
যে পাহাড় অপেক্ষার, তার পাইনি কোন খোঁজ
তার হরেক রঙিন সুখ
আঁচড় কেটে গেছে
ছায়া ফেলে গেছে, সকরূণ রোদ্দুর ।।

অন্য পৃথিবী

(৩০মে,২০০৭)

দেখলাম, সূর্যটা ডুবে গেল...
সব বুনোহাঁস মারা পড়ল...
আর্তনাদ করে উঠল বিপন্ন ডাহুক,
পৃথিবীটা অন্য রকম,

রাত্রি অন্ধকার, খালবিল ভ'রে ওঠে
গর্ভবতী মাছেদের মৃতদেহে...
শ্বাপদের দল, খুবলে খাচ্ছে হরিণশাবকের বুক...
ঈশ্বরের গলিত লাশের উপর শকুনের চিৎকার... হাহাকার
কাউকে চিনছেনা না কেউ, কোনদিন চিনবেনা
সবাই উল্লাসে মেতে - হত্যা,খুন,জখমে...
যুগ থেকে যুগান্তরে ।।

কবিতা - কষ্ট - বৃষ্টি

(০৮এপ্রিল,২০০৬)

সাদা কাগজের ওপর কিছু শব্দকে নিয়ে খেলছি..
এভাবেই সময়গুলো বেশ কেটে যায়,
আজকাল নিজের সাথে কথা বলতে শিখেছি -
যেহেতু আমার আর কেউ নেই,
একা থাকার কষ্টটা নয়
একা থাকার লোভটাই বোধহয়
ভালো থাকার সব উপাদান বাষ্পীভূত করে দেয়..
সৃষ্টিছাড়া জঘন্য এক মাথার অসুখ বাঁধিয়েছি,
দেই-দিচ্ছি করেও বহুকাল ভালো করে ঘুমোইনি...
আদৌ কি বেঁচে আছি...

বিষয়-আশয় যা ছিল সব ছুঁড়ে ফেলে
পুড়িয়ে দিয়েছি যাবতীয় সুখ..
এরপরও কখনও কখনও পেছনে তাকাই,

ভাবালুতায় বজ্রেরা কানামাছি খেলে..
তারপর, বলা নেই কওয়া নেই
ঝুপ ঝুপ বৃষ্টি নেমে পড়ে ।।

বৃহস্পতিবার, ১৭ ডিসেম্বর, ২০০৯

আমি ভালবাসা বুঝিনা

তুমি তবু ভালবেসেছিলে
আমি তো তাও পারিনি
কারণ আমি ভালবাসা বুঝিনা আজও

একসময় ভাবতাম চোখে চোখ রেখে 'ভালবাসি'
বললেই বুঝি ভালবাসা হয়,
তাই তো দেখতে চেয়েছি তোমার চোখ..
চোখে চোখ পড়ার পর কী যে হলো..
কিছুই বলতে পারলাম না, তবুও বলতেই হবে...
চোখ বন্ধ করে কানে কানে বলে দিলাম..
তাও বোধহয় উচ্চারণে ভুল হলো...

প্রথম যেদিন হাত ধরলাম, সেদিনও বলতে পারতাম..
কিন্তু সঙকোচের ভারে ঐদিনও পারলাম না...
তার বদলে বললাম "বেশ নরম তো তোমার হাতটা"..
কী হাস্যকর...

প্রথম চুমু খাওয়ার পরও 'ভালবাসি' বলা যেত...
অথচ আমি কি করেছিলাম...
চোরের মতন এদিক ওদিক তাকিয়েছি...
মুখ ফসকে বেরিয়ে গেছে, "কেউ দেখেনি তো.."

আজ যখন তোমার আর আমার মাঝখানে কিছু নেই...
মানে আমিই শেষ করে দিয়েছি... তখনও
জোর দিয়ে বলতে পারিনা.. তোমায় সত্যি ভালবাসতাম..
মুঠোফোনেও না...

তবু তো তুমি সত্যি ভালবেসেছিলে..
আমি তো ভালবাসা বুঝিই না... বাসবো কী করে...

ঞরূদ

তোমার চুলে বুঝি সূর্য নিভে যাবে
তবু এস, চুলের গন্ধ নেব আমি ...
তোমার হাত ধরতে হবে অতি শীঘ্রই
তোমার চোখে চোখ রাখা দরকার
কেননা, তোমায় বড়ো প্রয়োজন
অতঃপর ঞরূদ, সবই তোমার আমার যা কিছু...
ঞরূদ... ঞরূদ... ঞরূদ...
আকাশ আর মাটি মিশে যাবে, তো...
তবুও এসো, আসতেই হবে...

তুমি আসছনা বলে, কিছু ভাবা যাচ্ছে না,
মারাত্মক স্থবিরতার মধ্যে আছি...
ভয়াবহ শূন্যতা ।।

ডায়েরির ছেঁড়া পাতা ; ২৮ নভেম্বর ২০০৯

আমার আরোপিত একাকীত্বকে ছিঁড়ে ফেলে, কিছুক্ষণ আগে
স্টীলের বাটিতে গরম দুধ দিয়ে গেছেন আমার আম্মা, তাকিয়ে দেখেছি
বাটি-চামচ-সাদা গরম দুধের ধোঁয়া পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠেছে ওপরে...
তারপর বাতাসের সঙ্গে মিশে গিয়ে এক অদ্ভুত গল্প ... এই মুহুর্তে
ধোঁয়াটা বড়ো বেশি সূক্ষ্ম, খুব ভাল করে খেয়াল না করলে দেখাই যায় না,
দুধটা এখনও বেশ গরম.. অপেক্ষা করছি... আপাততঃ খাচ্ছিনা...

দুধ কেন খাবো.. দুধ খেলে কী হয়...
আম্মা কলের ধারে.. বাসন মাজছেন.. কলের হাতলে ধাক্কা মারছেন..
সেই আওয়াজটা অন্যরকম একটা কান্নার শব্দের মতন শোনাচ্ছে...

এখন একাকীত্ব জাপটে ধরেছে আমায়.. আরোপিত নয়.. সহজাত...
তাই কেমন একটা দমবন্ধ করা অনুভূতি... খারাপ বা কষ্ট লাগার কাছাকাছি...
দুধ খেতে ইচ্ছা করছে না.. তবু গিলতে হবে... ধূর...

আমাকেই বলছি

চাওয়া আর পাওয়ার হিসেবটা এখ্খুনি করে ফেলোতো...
প্রাপ্তির লিস্টিটা প্রথমে করো...
প্রথমে রাখো জন্ম (ওইটাই সবচে' বড় প্রাপ্তি এযাবৎ),
এরপর জন্মপরিচয়, বোন, আত্মীয়স্বজন..
মা-বাবা-বোনের স্নেহের কথা ভুললে অন্যায় হবে, ঢের পেয়েছে..
এক জীবনের জন্য যথেষ্ট... আরও চাও...
ছোট্টবেলায় খেলনা পেয়েছ অনেক, যদিও খেলাধূলা তেমন একটা করনি..
পড়াশোনায় মাঝামাঝি ছিলে.. কই, বেদনার স্মৃতি তো নেই স্কুল নিয়ে,
বন্ধু-বান্ধব তেমন একটা ছিলনা.. চাইতেও না তেমন,
বন্ধুহীন বিশেষণ টাকে বেশ তৃপ্তির সাথেই নিতে, অদ্ভুত...
তবুও তো কত্ত ভাল ভাল বন্ধু পেয়েছ..
ক'জনের ভাগ্যে এমন ভাল বন্ধু জোটে, বলো..
দেশের স'বচেয়ে ভাল প্রতিষ্ঠানে ভাল একটা সাবজেক্টে পড়াশোনা করছ..
এরাই তোমার এযাবৎ বড় বড় প্রাপ্তি.. কম কী..
অনেক.. অ-নেক ভাগ্যবান তুমি বুঝলে, দেখো...
প্রাপ্তি লিস্টিটা কত্ত বড়ো.. হুমম...

এবার দেখা যাক কী কী পেলে না (এযাবৎ যা চেয়েছ অথচ পাওনি)
হুমম.. গান শিখতে চেয়েছিলে.. পারনি.. বাহ্... তোমারই তো দোষ..
এই.. বাবাকে দোষ দেবে না খবরদার... তুমি আলসেমি করেছ.. কুণ্ঠিত থেকেছ...
যাও... এটা অপ্রাপ্তি বললে ভুল হবে... শুধু তাই না অন্যায় হবে..
চলো চলো.. তারপর.. অ.. কমন আপসেট.. লাভ ফ্যাক্টর.. হা হা হা..
রীতু.. হা হা হা... এই ওটা ছ্যাকা নয় বৎস.. মনে নেই ক্লাস সিক্সের ঘটনা..
মেয়েটাকে কীভাবে মিথ্যে অপবাদ দিয়েছিলে.. ছিঃ... জানো..
এটা কতবড় অন্যায়.. কতবড় পাপ... ও কোন হিসেবে তোমার হাত ধরবে...
তুমি ভাব কী করে আশ্চর্য.. ছিঃ ছিঃ.. আর তুমি সবাইকে কী বলে বেড়াচ্ছ...
উল্টো বলেছ.. নিজেকে সাধু বানিয়েছ.. হায়রে সাধু... আর কত ভাল সাজবে..
স্বীকার করে নাও তুমি পাপী...
তারপর বন্ধুত্বের দূর্বলতার সুযোগ নিলে আরেক কন্যার.. লজ্জার মাথা খেয়ে
প্রেম নিবেদন করলে.. তাও আবার এসএমএস-এ...
কী নাটক.. ভান করলে ওটা তামাশা.. কতটা লুসার তুমি,
পরে ঠিক ঠিক স্বীকার করলে..হাহ্.. তারপর.. ছন্দাকে কেমন ক'রে ঠকালে..
কী ভেবেছ.. ও তোমায় কোনদিন ক্ষমা করবে.. কখ্খনও না..
যদি করেও সেটা ওর মহত্ত্ব.. তুমি কোনভাবেই তার যোগ্যতা রাখনা...
শোনো.. ভালবাসা জিনিসটা পাওয়ার সকল যোগ্যতা তুমি হারিয়েছ...
দেখতেও কি বিচ্ছিরি তুমি.. ওয়াক... প্লিজ বাদ দাও এসব...
দেন... যণ্ত্রণা, দুঃখ, কষ্ট, বিষাদ.. ব্লা ব্লা ব্লা... আরে.. এসব তো প্রাপ্তি...
আরে গাধা, এসব সবারই থাকে.. স্যাডিস্ট হতে চাও, না... আত্মপ্রতারক...
তোমার কি কোন সাহস আছে... যা-হোক .. অন্য কিছু বলো...
কী.. মৃত্যু চাও... হা হা হা ... ভন্ডামি রাখো... ও যদি সত্যি আসে না...
তোমার যে কী অবস্থা হবে জানা আছে.. দৌড়ে কূল পাবে না, বুঝলে.. ভন্ড...
যে বন্ধুটা বেঁচে আছে, কী অবলীলায় তাকে মৃত বানিয়ে দিলে... হায়রে..
একটিবারও অসুস্থ বন্ধুটাকে দেখতে গেলে না...
খোঁড়া সব অজুহাত নিয়ে ব'সে আছ... আরে গর্দভ, নিজেকেই ঠকাচ্ছ..
তুমি আবার কবিতা ভালবাসো.. না.. কীভাবে আশা করো কবিতাকে...
একটা ঠগ, প্রতারক, মিথ্যেবাদী কখ্খনও কবিতা ভালবাসতে পারে না...
মানুষের কাছ থেকে করূণা ভিক্ষে করে চেটেপুটে খাও তুমি..
আচ্ছা.. কবিতা যখন আবৃত্তি কর (তোমারটা আবৃত্তি হয় না).. তখন কি
একটুও মনে পড়ে না ছন্দার কথা.. খারাপ লাগে না একটুও.. এতটা লম্পট তুমি..
কবিতা যখন লেখার ভান কর (কোনদিন কবিতা হবে না ওসব)... তখন
অসুস্থ বন্ধুটার কথা মনে পড়ে না.. যাকে মনে মনে মেরে ফেলেছ...
না... আর কিছু বলার নেই.. যথেষ্ঠ হয়েছে...
এবার বলো... প্রাপ্তি-অপ্রাপ্তির হিসেব মেলানোর
কোন যোগ্যতা কি আর আছে তোমার... অবশেষ...
ভন্ডামি বাদ দাও... ঢের পেয়েছ...আর কী চাও...
এই হিসেবটা জীবনের শেষ প্রান্তে গিয়ে আবার করবে ...
মাঝখানে আর করো না.. অর্থহীন কাজ...
এখনও সময় আছে... প্রায়শ্চিত্ত কর.. প্রায়শ্চিত্ত কর...
অভিশাপ বহন করার মতোন শক্তি বা সাহস কোনটাই তোমার নেই ।।

সোমবার, ১৪ ডিসেম্বর, ২০০৯

গন্তব্য ; একটি যৌক্তিক মৃত্যু

বিশুদ্ধ একাকীত্বের চাদর পরনে কিছু জীব
মহাকালের কুয়াশাচ্ছন্ন চৌরাস্তায় এসে একটু দাঁড়ালো,তাকালো
প্রথমে ডানে, তারপর বামে, আবার ডানে
রাস্তার ধারে সারি সারি মানবতার ল্যাম্পপোস্ট, কোনও কোনটা বিকল..
অনেক উপরে অন্ধকার, তারা যাকে আকাশ নাম দিয়েছে
দেখা যাচ্ছে না, তবুও তারা ভেবে নিচ্ছে -
তমসা ফুঁড়ে কিছু আলোকবিন্দু তখনও জ্বলজ্বল,ব্যস ওইটুকুই...

যেহেতু পেছনে ফেরা যায়না, তারা এগিয়ে যায় অনন্যোপায়
গন্তব্য ; একটি যৌক্তিক মৃত্যু,
চলতি পথে উষ্ণতার প্রয়োজন পড়বে
একটু পর পর গজিয়ে ওঠা স্টল থেকে ওরা
কয়েক কাপ কড়া প্রত্যাশায় চুমুক দেবে
তারপর আবার হেঁটে যাবে, প্রতিবন্ধকতায় হোঁচট খাবে
ক্লান্তি উড়ে আসবে, গায়ে এসে পড়বে
তবু ওরা এগিয়ে যাবে, ইতিহাস পায়ে মাড়াবে,
প্রত্যেকের কাঁধে এক বোঝা দায়ভার
যার বোঝা যত কম হবে, তার মৃত্যু তত যৌক্তিক আর অর্থবহ হবে
চলনসই একটা মৃত্যু গড়ে নিতে, ওরা সব করবে, স-ব...

পথে চোখে পড়বে আরো অনেক জীব, অসংখ্য, অগণিত
হেঁটে যাচ্ছে গা ঘেঁষে, একটু তফাতে, যেন মিছিলের পর মিছিল,
মাঝে মধ্যে চোখে চোখ পড়ছে, ওরা হাসছে,
ছোট্ট ছোট্ট আলাপচারিতায় মেতে উঠছে,
যে যার কথা বলেই চলেছে, মূলতঃ শুনছে না কেউই.. নাকি শুনছে
শব্দগুলো ছুটে বেরিয়ে যাচ্ছে..

কেউ কেউ আবার হঠাৎই গন্তব্যে পৌঁছে যাচ্ছে
আগ্রহ নিয়ে তাকাচ্ছে কেউ কেউ ..
ওরাও বুকের মধ্যে স্বপ্ন গুঁজে হেঁটে যাচ্ছে,
একটি সুন্দর মৃত্যু, এর থেকে আর সুন্দর কী হতে পারে ।।

মঙ্গলবার, ৮ ডিসেম্বর, ২০০৯

নারীর নয়; বরং চায়ের ঠোঁটে ঠোঁট রাখতে ইচ্ছে করি

অন্যান্য পথে আমি হেঁটে যাবো এইবার
পথ থেকে তোমাদের সুখ কুড়োবার
শখ শেষ
সব শেষ

একা বেঁচে ঈশ্বর হবো
বুক থেকে ছড়িয়ে দেবো
সোনা রঙ
যত রঙ

একদিন সময় করে
আকাশটা বুকে ধরে
সুর্যকে কামড়ে খাবো
তারপর ভুলে যাবো

এইবার মিশে যাই

ঘাসের মধ্যে মিশে যাই...
ধুলোর মধ্যে মিশে যাই....
আকাশ চেরা আগুন দেখি...
নতুন কুঁড়ির স্বপ্ন বুকে...
কোন গাছেদের নিদ্রা ভাঙে...

এই পৃথিবীর অন্য অন্য স্বপ্নচারী...
স্বপ্ন বানায় রঙবাহারী...

ডেকে ফেরে জলের মানুষ...
আসল মানুষ...
অদ্ভুত এক কুয়োর ভেতর..

অচেনা কোন্ স্বপ্নকিশোর...
গল্প দেখে... আকাশ লেখে...
আমি যেমন ঢেউ দেখিনি...
পাহাড়চূড়োর রূপ বুঝিনি... সুখ খুঁজিনি...
খুঁজতে খুঁজতে কেবল ধুলো... কেবল ঘাসে...
যাচ্ছি মিশে...
অভ্যস্ত দীর্ঘশ্বাসে...